প্রায় ১০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মুখোমুখি হয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শহরে দুটি ছয়তলা বাড়ি, ১০০ একরের বেশি জমি ও বাজারসহ বেশ কিছু সম্পদের মালিক তিনি। যা তিনি তার নিজের নামের পাশাপাশি তার স্ত্রী, ভাই ও ফুফুর নামে নির্মাণ করেছেন।
কিন্তু জাদুর কাঠির সঙ্গে পাওয়া কর্মকর্তার বাবা ছিলেন দিনমজুর। এই কাজ করে তিনি কিভাবে শত কোটি টাকার মালিক হলেন? সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আলাদিনের বিস্ময় প্রদীপের সন্ধান ছাড়া এত সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব নয়।
জানা গেছে, জসিম উদ্দিন এক সময় কুমিল্লায় ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে কারণে গত বছরের শেষ দিকে দুদকের কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। সম্প্রতি তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান রুবেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত পর্যায়ে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও সীতাকুণ্ড সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, ভূমি অফিস, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি-বেসরকারি অভিযোগ সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি বর্তমানে যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফজলুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি তদন্ত পর্যায়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
কাস্টমস থেকে ৬১ কেজি সোনা চুরি, রাঘব-বোয়ালদের খুঁজছে দুদক
অপরদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, তিনি ফোন বা মেসেজের কোনো সাড়া পাননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন সাধারণ বাড়ি থেকে আসা একজন কর্মকর্তা কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন তা আমাদের তদন্তের লক্ষ্য। নিজের নামে এবং পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদের মালিকানা এবং অধিগ্রহণের সময় গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এক সময় কুমিল্লায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে হিসেবে কুমিল্লা থেকে খোঁজ করা হচ্ছে। যতটুকু নথি পাওয়া গেছে তাতে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ রয়েছে। তবে অভিযোগে যা বলা হয়েছে তা সত্য নয়। অনুসন্ধান শেষ হলে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।
অভিযোগে বলা হয়, জসিম উদ্দিন সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা হলেও তার বাবার পরিচয় সন্দীপ। তবে সম্পদের অভিযোগ মূলত সীতাকুণ্ডের সম্পদকে ঘিরেই। জসিম উদ্দিনের বাবা নাবালক দিনমজুর ছিলেন। তার শ্বশুর ছিলেন সরকারি ফায়ার সার্ভিসে ফায়ারম্যান। তার বড় ভাই একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক। তার ছোট ভাই একটি ছোট সরকারি চাকরি করে। রানা প্লাজার ঘটনার পর সরকার গার্মেন্টস ফার্মগুলোকে দমন করার পর থেকে অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার এই সুযোগকে পুঁজি করে জসিম বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিনি চট্টগ্রামের সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ফায়ার ফাইটিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন এবং কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম নিতে বাধ্য করে তার অসাধু আয়ের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে জসিম উদ্দিন নিজের নামে কম সম্পত্তি কিনেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্ত্রী, বোন, ভাইয়ের মেয়েসহ নিকটাত্মীয়দের নামে প্রায় সব সম্পত্তি কিনেছেন তিনি। অভিযোগে বলা হয়, জসিম উদ্দিন সরকারি কর্মচারী হয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মালিক।
অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড স্টেশন কলেজ রোডে কালী মন্দিরের সামনে নির্মিত বদিউল আলম নিউমার্কেট, সীতাকুণ্ড মধ্যম মহাদেবপুরে (কলেজ রোড) ৬ তলা ভবন, সীতাকুণ্ড মধ্যম মহাদেবপুর চৌধুরী পাড়া এলাকায় জসিমের নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবন। .
অন্যদিকে স্ত্রী পারভীন আক্তারের নামে সীতাকুণ্ডের চৌধুরী পাড়ায় একটি ছয়তলা ভবন, কলেজ রোডের এসপি মার্কেট, স্ত্রীর নামে এক হাজার শতাংশ জমি এবং অন্যটিতে ২ শতাংশ জমিসহ একটি দোকান রয়েছে। স্থান
এছাড়া সীতাকুণ্ডের চৌধুরী পাড়ার পূর্ব পাশে জসিম উদ্দিনের বড় ভাইয়ের নামে কেনা প্রায় ২৪ শতাংশ জমি এবং চট্টগ্রাম ইপিজেডের ভেতরে বড় ভাইয়ের ছেলের নামে একটি কারখানা রয়েছে। আর জসিম উদ্দিনের শ্যালক মো. অভিযোগে বলা হয়, সেলিমের নামে ৮০০ শতাংশ ও ৫০০ শতাংশ জমি এবং দুটি নোহা গাড়ি ও দুটি প্রাইভেটকার রয়েছে।