সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক আলোচিত ব্যক্তিবর্গকে মধ্যে অন্যতম এক নাম তসলিমা নাসরিন। এছাড়াও বাংলাদেশের এক সময়ের বেশ খ্যাতিমান লেখক হিসেবেও নাম রয়েছে তার। এই মুহূর্তেই ভারতে বসবাস করছেন তিনি। তবে বর্তমানে খুব একটা ভালো নেই আলোচিত এই লেখিকা। জানা গেছে, হোঁচট খেয়ে পড়ে হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফিরেই চিকিৎসকদের উপর অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক পোস্টের মাধ্যমে বলেন, টাকার লোভে কিছু অসৎ ডাক্তার আমি যে রোগের রোগী নই, সেই রোগের রোগী বানিয়ে আমার সর্বনাশ করেছে, আমার আয়ু অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে, জীবনকে দুর্বিষহ করেছে, জীবন যাপনের আনন্দ অনেকটাই নষ্ট করেছে, কিন্তু আমি তো আমিই থাকবো, সে যতদিনই বাঁচি।
পোস্টে তিনি আরও বলেন, দীর্ঘজীবন না পাবো, না পেলাম। কিন্তু অল্প ক’দিনই মাথা উঁচু করেই বাঁচবো। নিজের আদর্শ নিয়েই বাঁচবো। কোনও আদর্শ বিসর্জন দেবো না, মৃত্যু এলে আসুক।
এর আগে, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে তিনি জানান, লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে পঙ্গুত্ব কিনে বাড়ি ফিরলাম। শুক্রবার দুপুরে হোঁচট খেয়ে পড়ে হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম শুক্রবার রাতেই। এক্সরে করে দেখতে চেয়েছিলাম হাঁটুর লিগামেন্টে কিছু হলো কিনা। হিপ জয়েন্টে কোনো ব্যথা ছিল না আমার। হিপ জয়েন্ট ডাক্তাররা পরীক্ষা করেও দেখেননি। কিন্তু এক্সরে করে বলে দিলেন আমার হিপ ভেঙেছে, হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে। তারপর তো ডাক্তারদের ওপর শতভাগ বিশ্বাস, আমার অজস্র নির্বুদ্ধিতা, আমাকে ওদের ভিক্টিম করেছে।
পোস্টে তিনি আরও বলেন, প্রথম এক্সরে রিপোর্ট হাতে পেয়েছি, ওরা রিপোর্টটি সরিয়ে ফেলে নতুন করে লেখার আগে। প্রথম রিপোর্টে লেখা ছিল, ‘পুরোনো একখানা ফ্র্যাকচার দেখা যাচ্ছে’। হ্যাঁ পুরোনো একখানা ফ্র্যাকচার যেটা কোনো এক কালে ঘটে নিজে নিজেই হীল হয়ে গিয়েছিল। এরকম থাকে শরীরে। হীল হয়ে যাওয়া পুরোনো ফ্র্যাকচারকে আড়াল করে আমাকে নতুন ফ্র্যাকচারের গল্প শুনিয়ে তারা শনিবার দুপুরেই তড়িঘড়ি আমার টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করে দিলো।
তসলিমা বলেন, সবচেয়ে হাস্যকর জিনিস, ইমারজেন্সিতে গিয়ে আমি যা বলেছি, আমার হাঁটুর ব্যথার কথা, সেটি সম্পূর্ণ ডিলিট করে দিয়ে ডিসচার্জের সময় নতুন করে হিস্ট্রি লিখে দিয়েছে, যেখানে হাঁটু শব্দটিই নেই, আছে হিপ হিপ হিপ। আমি নাকি হিপ জয়েন্টের যন্ত্রণায় কাতরেছি, আমার হিপ জয়েন্ট নাকি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বাহ, কী সুন্দর হিস্ট্রি পাল্টে দেওয়া হলো। মূল হিস্ট্রি গায়েব।
পোস্টের শেষে তিনি বলেন, আমাকে এখন এই ভেবে সান্ত্বনা পেতে হবে, যেদিন হোঁচট খেয়েছিলাম, সেদিন হয়তো আমার মাথা মেঝেতে লেগে ফেটে যেতে পারতো, আমি মরে যেতে পারতাম। আমার হিপ জয়েন্ট আর ফিমার গেছে চিরতরে, আমার জীবন আর আগের জীবন নেই, আমার চলাফেরা স্লথ হবে যদি কোনোদিন হাঁটতে পারি, স্থবির জীবনে অজস্র রোগশোক এসে বাসা বাঁধবে, কিন্তু আপাতত বেঁচে তো আছি। এইবা কম কিসে!
তবে চিকিৎসার ব্যাপারে তসলিমা নাসরিনের করা অভিযোগের আলোকে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি।