লোডশেডিং-এর কারনে বিরক্ত সারাদেশের মানুষ। কেন এমন লোডসেডিং হচ্ছে জানার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বর্তমান অবস্থা ব্যাখ্যা করে প্রতিমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, গত দুই বছরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রভাব সর্বত্র অনুভূত হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যু বিশ্বকে এক গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত করেছে ঠিক যখন সবাই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া রোগ থেকে সেরে উঠছে।
এই সংকট শুধু উন্নয়নশীল দেশেই নয়, অনেক উন্নত দেশেও রয়েছে। যুদ্ধের প্রভাব জ্বালানি বাজারকে অত্যন্ত অস্থির করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক খাদ্য বাজারও অস্থির। এই বৈশ্বিক সংকট আমাদেরও বিপদে ফেলেছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের 1,600 থেকে 1,800 মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। সেখানে আমরা মাত্র 900 মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারি। আমরা বেশি গ্যাস দিতে পারছি না কারণ আমাদের কৃষি ও শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কৃষির জন্য সার অপরিহার্য। সার উৎপাদনের জন্যও আমাদের প্রচুর গ্যাস দিতে হয়। ‘
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান গ্যাস উৎপাদন ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকি চাহিদা এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরও দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ছিল মাত্র ১৬৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। সেখান থেকে আমরা উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক 2,650 মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করেছি। 2017 সাল পর্যন্ত আমরা এই ক্ষমতায় গ্যাস উৎপাদন করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন কমতে শুরু করেছে, আমাদের খনিতে মজুদ হ্রাসের কারণে।
আমরা এলএনজি আমদানির জন্য কাতার ও ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি পাচ্ছি। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করতাম। করোনার আগে আমরাও ৪ ডলারে এক ইউনিট এলএনজি আমদানি করতাম, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা ৪১ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এত বেশি দামে আমদানি আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। এটা শুধু গ্যাসের দাম নয়। সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। ডিজেল 2021 সালের জুলাই মাসে ব্যারেল প্রতি ৭৭ ডলার ছিল, কিন্তু এই বছরের জুনে তা দাঁড়িয়েছে ৭১৬১ ডলারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিজস্ব জ্বালানি অনুসন্ধান করছে, উৎপাদন বাড়াচ্ছে এবং বিদ্যমান কূপের গভীরে খনন করছে। ইতিমধ্যে, আমাদের আগামী তিন বছরের জন্য একটি আপগ্রেড, একটি ওয়ার্কওভারের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে প্রতিদিন 617 মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস 48টি কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে পুনরায় সংযোগ করা যায়।
নসরুল হামিদ বলেন, আশা করি এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। এ বছরের মধ্যে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ভারত থেকে আমদানি করা ১৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সবার মনে আছে ২০০৮ সালের আগে সারা দেশে দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। আপনি সেই কঠিন সময়ে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করেছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমি এই সংকটের সময়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখতে চাই। আমরা সবাই মিলে এই সংকট কাটিয়ে উঠব।