আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করেছি। আমি ২০১৫-১৬ সেশনের ছাত্র ছিলাম। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে, আমি উচ্চ শিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাই, এবং কেনটাকিতে মিডওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই।
ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দিন একটু অবাক হয়েছিলাম। আমি জানলাম যে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র এবং প্রথম বাংলাদেশী ছাত্র। আমি যতদূর জানি ঘটনাটি খুবই নাটকীয়। লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখলাম ২৫-৩০ টি দেশের পতাকা সাজানো আছে। জিজ্ঞেস করে জানলাম, যেসব দেশের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করেছে বা বর্তমানে পড়াশোনা করছে, তাদের সম্মানার্থে তাদের দেশের পতাকা রাখা হয়। কোথাও বাংলাদেশের পতাকা নেই দেখে একটু মন খারাপ হলো।
বাড়িতে ফিরে আমি পতাকা দাবি করে একাডেমিক উপদেষ্টাকে মেইল করেছিলাম। তিনি খুব খুশি হয়ে মার্কেটিং টিমকে পতাকা কেনার দায়িত্ব দেন। যেহেতু আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশী ছাত্র, আমি সবসময় সেই জায়গা থেকে আমার দেশ ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছি।
দেশ থেকে লুঙ্গি, গামছা, পাঞ্জাবি নিয়েছিলাম সঙ্গে। তাই পরিকল্পনা ছিল, একদিন ক্লাসে লুঙ্গি পরে সবাইকে চমকে দেব। আরও বড় সুযোগ এসেছিল একদিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – কালারস অফ মিডওয়ে ইউনিভার্সিটি ক্লাস শুরুর এক মাস পর অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বুঝলাম, এটাই পারফেক্ট সুযোগ। আমি একটি লুঙ্গি, পাঞ্জাবি এবং আমার কোমরে একটি গামছা পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হলো, বিদেশি বন্ধুরা এবার আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নিজ নিজ দেশের জাতীয় পতাকার মাধ্যমে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তখন আমাকে মঞ্চে ডাকা হলো আমার দেশ ও দেশের সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলার জন্য। বাঙালি পোশাক পরে মঞ্চে ওঠার পর থেকেই উপস্থিত সবার সে কী তালি! আমার তেমন কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। তারপরও ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস, দেশীয় খাবার, মানুষের সরলতা, অসাম্প্রদায়িকতা, পোশাকশিল্প, কক্সবাজার, সুন্দরবন ইত্যাদি বিষয়ে যতটুকু সম্ভব বলেছি।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় নাচ, গান, বিভিন্ন খেলাধুলা এবং সবশেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সবার উদ্দীপনা, অনুপ্রেরণা এবং ভালোবাসায় এটি একটি দুর্দান্ত দিন ছিল।