প্রায় ২২ মাস হলো গুরুতর ও দু/রারোগ্য লিভার সিরোসিসে ভুগছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় তার পরিপাকতন্ত্রে বেশ কিছু র/ক্তক্ষরণ হয়। সিরোসিস অনেক আগেই এই অঙ্গটি সঙ্কুচিত হয়েছিল এবং প্রায় তার কার্যকারিতা হারিয়েছিল। এ অবস্থায় তার লিভারের চিকিৎসা দিন দিন জটিল হচ্ছে। গুরুতর র/ক্তপাতের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার শারীরিক অবস্থার মাঝে মাঝে উন্নতি হয় এবং কিছুক্ষণ পর অবনতি হয়। এ অবস্থায় তিনি এখন বাড়ি ফিরতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’। এ কারণে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তার লিভার, হার্ট ও কিডনির সমস্যা আ/শঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চলতি বছরের ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন তার লিভার, হার্ট ও কিডনির সমস্যা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গত মঙ্গলবার সকালে বিএনপিনেত্রীর মেডিকেল বোর্ডের জ্যেষ্ঠ সদস্য যেমন লিভারের জটিলতা বাড়লে, যখন তার চিকিৎসা দিয়ে একটা পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়, তখন কিডনি বা হার্টের জটিলতা দেখা দেয়। চিকিৎসকরা আবার সেই জটিলতা মোকাবেলা করছেন। এভাবেই খালেদা জিয়াকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এই চিকিৎসাটি অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও বহন করে। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে চিকিৎসকদের ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হয়।
লিভার সিরোসিস এমন একটি রোগ যেখানে লিভার তার স্বাভাবিক কাজগুলি যেমন বিপাক, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ, ওষুধ এবং রাসায়নিক শোষণ এবং খাদ্যে পুষ্টির ব্যবস্থাপনা করতে পারে না। খালেদা জিয়া এসব সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান তার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য।
মেডিকেল বোর্ডের এই সদস্য আরও বলেন, যেহেতু খালেদা জিয়াকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে, তাই এখন তাকে বাসায় নেওয়া সম্ভব নয়। তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় তার বাসায় ফেরার বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময় বলতে পারছেন না তারা।
দুই বছর ধরে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। এখন তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, লিভার ট্রান্সপ্লান্টের জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যেতে হবে। তারা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতার জন্য তারা দেশে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়েছেন। এখন তাদের আর কিছু করার নেই।
এখন খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রামে তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। তার একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাত, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দু/র্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবরণ করেন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে, দেশে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রাদুর্ভাবের পরে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। এরপর গুলশানের বাসায় ওঠেন।