গত ১৭ জুলাই ছুটিতে মাগুরায় গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহনন করেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি খন্দকার লাবনী। সংবাদ মাধ্যমকে তার মৃত্যুর নিশ্চিত করেন বাবা শফিকুল আজম। তবে সঠিক কি কারনে তিনি মৃত্যুর পথ বেঁছে নিয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো কিছু জানতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে লাবনীর মৃত্যুর পর তার অনেক স্মৃতি তুলে ধরে অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল হাসান গনি বলেছেন, আমি যখন শেরপুরের পুলিশ সুপার খন্দকার লাবণী তখন একজন তরুণ পুলিশ অফিসার। অফিসে প্রায় সহকর্মী হিসেবে আসতেন। যে কোনো বিষয়ে যোগাযোগ করতেন। কথা বলতেন। অফিসের কাজ শেষ করে প্রায় প্রতিদিন লাঞ্চে যেতে দেরি হয়ে যেত। লাবণী এসে খোঁজ নিয়ে বলতো, স্যার, এখনো খেতে যাননি? বাসায় যান খাবার খেয়ে আসেন। লাবণী আমার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও বা আমি তার সিনিয়র অফিসার হলেও তার সাথে আমার মাদারলি ভাব ছিল। এমনভাবে কথা বলতো যে মনে হতো আমার মা কথা বলছে।
রফিকুল হাসান গণি যখন শেরপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন তখন তিনি জেলা পুলিশের লাবণী সার্কেল এএসপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রফিকুল হাসান বর্তমানে র্যাব-১২ এর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
লাবণী প্রসঙ্গে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েকদিন আমরা সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছি। তিনি একজন মেধাবী পুলিশ অফিসার ছিলেন। পুলিশ অফিসার হিসেবে সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমি তাকে ডাবল এ প্লাস গ্রেড দিতাম। যেকোনো সমস্যা দ্রুত সমাধান করে যেত। এলাকাবাসী তাকে খুব ভালোবাসত। যে কোন কাজে তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক।
বুধবার রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহনন করেন লাবণী। পরদিন ময়নাতদন্তের পর মাগুরায় তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
শেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনের রাতের বর্ণনা দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল হাসান গণি বলেন, ‘একবার শেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় রাত ৩টার দিকে লাবনী জানতে পারেন কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে। এরপর তিনি ঐ রাতেই ঘটনাস্থলে যান। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল বলে তিনি আমাকে এটি নিশ্চিত করেন। নির্বাচনের আগের রাতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার প্রশংসা করেছেন। তৎকালীন ডিসি বললেন- আমার জেলা প্রশাসনে এএসপি লাবনীর মতো সাহসী অফিসার দেখেননি। এমন অনেক ইতিবাচক অর্জন ছিল লাবনীর। এরপর তিনি শেরপুর ছেড়ে ময়মনসিংহে বদলি হন বলে জানান রফিকুল হাসান।
তবে লাবনীর মৃত্যু নিয়ে বাবা শফিকুল আজমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, অনেকদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো তাদের। হয়তো এই কারনেই লাবনী মৃত্যুর পথ বেঁছে বলে মনে করছেন তিনি।