Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিল র‍্যাব (ভিডিও)

লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিল র‍্যাব (ভিডিও)

গত শুক্রবার অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর ভোররাতে ঝালকাঠি সদর উপজেলার নিকটে সুগন্ধা নদীর মাঝখানে এমভি অভিযান ১০ এর ইঞ্জিন রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৪০ যাত্রী নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। তবে অনেক যাত্রী গুরুতর দগ্ধ হওয়ার কারনে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। রাত ৩টার দিকে লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিখোঁজদের সন্ধানে লঞ্চঘাট ও আশপাশে এখনও উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়া নিখোঁজদের স্বজনরাও ট্রলার এবং ছোট নৌযান ভাড়া করে তাদের খোঁজ করছেন। প্রত্যক্ষদর্শী এবং যাত্রীদের মতে, বিশালাকার এই লঞ্চটিতে প্রায় ১০০০ যাত্রী ছিল বলে জানা গেছে। এই ঘটনার জীবন নিয়ে বেঁচে ফেরা যাত্রীরা জানান, লঞ্চের নিয়ন্ত্রনকারী ও টেকশিয়ানদের গাফিলতির কারনে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তারা ইন্জিন মেরামতের পর সর্বোচ্চ গতি তুলে লঞ্চটি চালায়, যার কারনে ইন্জিন গরম হয়ে এমনটি ঘটেছে।

‘এমভি অভিযান-১০’ এর অগ্নিকাণ্ড এবং তাতে ৪০ জন প্রয়ানের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র‍্যাব। লঞ্চটির মালিক হামজালাল শেখকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পারে এই এলিট ফোর্স। র‌্যাব জানায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ ‘এমভি অভিযান-১০’ এ গত নভেম্বর মাসে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। এর জন্য নেওয়া হয়নি কোনো অনুমোদন। এ ছাড়া যাত্রীদের জন্য লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত কোনো লাইফ জ্যাকেট ছিল না। মালিক লঞ্চে আগুন লাগার খবর পেয়েও কোনো সংস্থা বা জরুরি সেবার কোথাও জানাননি। পালিয়েছিলেন লঞ্চের ক্রুরাও।

গতকাল সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে হামজালাল শেখকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের পর রাতে এ বিষয়ে ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানায় র‌্যাব।

রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা তৈরি করতে লঞ্চটিতে গত নভেম্বরে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো। গ্রেপ্তার মালিকের তথ্য অনুযায়ী, ঘাট থেকে বিলম্বে লঞ্চ ছাড়লেও গন্তব্যে আগে পৌঁছানো গেলে লঞ্চে যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। এ জন্য লঞ্চে ৬৮০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন পরিবর্তন করে ৭২০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়নি।

র‍্যাব জানায়, একজন সাধারণ মিস্ত্রি বা ফিটার দ্বারা ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়। আগের ইঞ্জিনটি চায়না থেকে তৈরি ছিল। বর্তমানে জাপানি তৈরি রিকন্ডিশন ইঞ্জিন লাগানো হয়। জাহাজের ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়ে এবং ইঞ্জিন পরিবর্তন পরবর্তী যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে কারিগরি অনুমমোদন নেননি। এ ছাড়া রান ট্রায়ালও করেননি। কমান্ডার মঈন জানান, লঞ্চে কর্মরত তিনজনের (মাস্টার ও ড্রাইভার) সরকারি কোনো চালনার অনুমোদন ছিল না।

ফোনে আগুনের সংবাদ পেলেও চুপচাপ থাকেন

লঞ্চটিতে আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে সুপারভাইজার আনোয়ার মোবাইল ফোনে মালিক হামজালালকে আগুন লাগার বিষয়টি জানান। কিন্তু তিনি কোনো সংস্থা বা জরুরি সেবা কোথাও জানাননি, বরং চুপচাপ থাকেন। আগুন লাগার পর লঞ্চের ক্রুরা (২৬ জন) জ্বলন্ত ও চলন্ত লঞ্চ রেখে পালিয়ে যান। এতেই ঘটনাটি আরও মর্মান্তিক হয়।

যাত্রীদের জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা ছিল না জানিয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, লঞ্চে শুধু কর্মচারীদের জন্য ২২টি লাইফ জ্যাকেট ছিল। যাত্রীদের জন্য ১২৭টি বয়া ছিল বলে গ্রেপ্তার মালিক জানিয়েছেন। তবে অধিকাংশ বয়াই যথাস্থানে ছিল না। এ ছাড়া লঞ্চটির কোনো ইনসুরেন্সও করা ছিল না বলে গ্রেপ্তার হামজালাল শেখ জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিন তলা বিশিষ্ট লঞ্চটি পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় লঞ্চটিতে আগুন ধরে যায়। পরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় নদীর তীরে লঞ্চটি ভেড়ানো হয়।

আগুন লাগার পরই প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যাত্রীদের অনেকে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ট্রলার নিয়ে লঞ্চের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, রাত ৩টা ২৮ মিনিটে তারা অগ্নিকাণ্ডের খবর পান। এরপর তাদের কর্মীরা ৩টা ৫০ মিনিটে সেখানে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের চেষ্টায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। স্থানীয় বাসিন্দা, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা করেন।

এদিকে এই দুর্ঘটনার পর মামলা দায়ের হয়, মামলার নথি থেকে জানা যায়, অবহেলার কারনে এত প্রানহানী ঘটেছে এবং যাত্রীর স্বজনেরা এর বিচার দাবি করেছেন। সরকারি সংস্থাগুলি এখন পর্যন্ত লঞ্চটিতে বেশ কয়েকটি অনিয়ম প্রকাশ করেছে যা কোনও অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই চলছিল। অনুমোদন ছাড়াই শুধু ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়নি, লঞ্চের চার মাস্টার-চালকের মধ্যে তিনজনের অনুমতি ছিল না। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে আরও তিনটি মামলা হয়েছে। শনিবার জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন এবং নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে বরগুনার আদালতে আরেকটি মামলা করেন। এছাড়া নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর নৌ-আদালতে আরেকটি মামলা দায়েরের পর সোমবার লঞ্চের মালিক হাম জালাল শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

https://www.youtube.com/watch?v=tuDyrNAXIio&ab_channel=WonderfulWorld

About

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *