ঢাকার ধামরাইয়ের বড়নালাই গ্রামের যুবক মো. রহমত উল্লাহ (২১) ১৬ মাস নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন। রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি নিজের বাড়িতে পৌঁছান। বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যদের মাঝে আবেগঘন দৃশ্য তৈরি হয়। মায়ের চোখে আনন্দাশ্রু, ভাইবোনদের মুখে হাসি, আর প্রতিবেশীদের চোখে ছিল বিস্ময়।
২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাতে র্যাব পরিচয়ে একদল লোক তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে রহমত উল্লাহর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার মা মমতাজ বেগম বলেন, “ছেলেকে আমি আবার বুকে পেলাম। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া।”
পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার (২১ ডিসেম্বর) একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন পেয়ে তারা রহমত উল্লাহর খোঁজ পান। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার রহনপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই মো. ফজলে বারী ফোন করে জানান, রহমত উল্লাহ সেখানে আছেন। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন, তাকে ৯ মাস ঢাকায় একটি অজ্ঞাত স্থানে চোখ, হাত ও পা বাঁধা অবস্থায় আটকে রাখা হয়। শুধু খাবারের সময় চোখ খোলা হতো। পরে তাকে যশোর সীমান্তে নিয়ে গিয়ে ভারতে পাঠানো হয়। ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ৭ মাস কারাভোগ করেন। সর্বশেষ দমদম জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়।
রহমত উল্লাহকে ভারতের সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পর তিনি গোমস্তাপুর থানায় যান। সেখান থেকে পুলিশ তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। থানার এসআই ফজলে বারী জানান, শুরুতে রহমত উল্লাহ ভয় পেয়েছিলেন, মনে করেছিলেন পুলিশ তাকে ক্ষতি করতে পারে। পরে তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হন।
জিজ্ঞাসাবাদে রহমত উল্লাহ জানান, র্যাব তাকে জঙ্গি সন্দেহে তুলে নিয়েছিল। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা পাওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান, ভারতে পাঠানোর আগে তাকে সীমান্তে মোটরসাইকেলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাকে দুজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রহমত উল্লাহর পরিবারের সদস্যরা জানান, এতদিন তারা ছেলেকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন তাকে পেয়ে তারা অত্যন্ত খুশি। তবে রহমত উল্লাহ এখনও অনেকটাই চুপচাপ, বেশি কথা বলছেন না এবং ঘটনার বিস্তারিত জানাতে আগ্রহী নন।
এই ঘটনা রহমত উল্লাহর পরিবার ও এলাকাবাসীর জন্য যেমন এক অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।