গতকাল অনেকটা হঠাৎ করেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মোঃ মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এরপর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। তবে ঠিক কি কারণে তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছিল, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কারণ প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি। মকবুলকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আরো ৫ জন সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই ৫ জন সচিবের বিরুদ্ধে ঠিক একই রকম সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ততা পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শুধু সচিব নয়, একাধিক অতিরিক্ত সচিবও এই ষড়যন্ত্রে জড়িত। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ১২। এই ১২ জনের প্রতিদিনের চলাফেরা, মোবাইল ফোন যোগাযোগসহ দেশে-বিদেশে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গত রোববার স্বাভাবিক নিয়মে অবসরে যাওয়ার প্রায় এক বছর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। বর্তমান সচিব ও অতিরিক্ত সচিবদের পাশাপাশি কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবও এ কাজে যোগ দেন। তাদের কারো বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হতে পারে, তা নিয়ে শীর্ষমহলে আলোচনা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা কিছু তথ্য নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিলাম, পদোন্নতিপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন। পরে আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছি। তারপর তাদের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ শুরু করি। প্রতিদিনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করা হয় এবং ষড়যন্ত্রের তথ্য মিলেছে। পুরো বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের উল্টো দিকের একটি কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতেন মকবুল হোসেন। ওই কার্যালয় পরিচালনা করেন বিএনপির এক শীর্ষ নেতা। সূত্র বলছে, অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। অনুসন্ধানে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে যে তাদের মধ্যে কয়েকজন লন্ডনে যোগাযোগ করছেন। ফলে গুরুতর অপরাধে জড়িত পাঁচ সচিবকে দ্রুত অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সচিব ও অতিরিক্ত সচিবসহ ১২ জনের তালিকা করে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। সবাইকে অবসর দেওয়া হবে না তবে কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে।
তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে সরকারের শীর্ষ মহল। ফলে অবসরে পাঠানো কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করছে গোয়েন্দা সংস্থা।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানানো হলে, সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মকবুল হোসেন। তিনি এ ধরনের কোনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন, তবে ছাত্রজীবনে তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
সূত্র জানায়, শুধু প্রশাসনের এসব কর্মকর্তাই নয়, মধ্য ও জুনিয়র পর্যায়ের কিছু গ্রুপ লন্ডনে যোগাযোগ রাখছে। এসব খবর সরকারের কাছে আছে। তাদের মধ্যে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে মেসেজ করা হচ্ছে। তথ্য সচিবের বিষয়টি নিয়ে সবাইকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে যারা দ্বিধাবিভক্ত, তাদের কাছে এটা স্পষ্ট বার্তা দেবে।
এই অবসরের মধ্য দিয়ে প্রায় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে দ্বিতীয়বারের মতো একজন তথ্য সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।২০০৯ সালে, তৎকালীন তথ্য সচিব এটি এম ফজলুল করিমকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে অবমাননা করে কবিতা লেখার জন্য সরকার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। তিনি সাহিত্যিক মহলে আবু করিম নামে পরিচিত ছিলেন।
২০১৪ সালের দিকে অনেকটা হঠাৎ করে ৫ জন সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে দেয় সরকার। জানা গেছে, ওই ৫ জন সচিব সুযোগের অপব্যবহার করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন লংঘন করার মাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। জানা গেছে তারা কেউই সেই সময় মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না।