ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের গাজীপুরের শ্রীপুরের বাঁখারিয়া এলাকায় রেললাইন কাটার ঘটনায় এক যুবদল নেতা ও তার সহযোগী ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শনির আখড়া কাঁচাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির বিশেষ অ্যাকশন গ্রুপ। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) আসাদুজ্জামান।
গ্রেফতারকৃত দুইজন হলেন- ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও যুবদলের বর্তমান নেতা মো. ইখতিয়ার রহমান কবির ও ঢাকার লালবাগ থানার ২৪ নং ছাত্রদলের সভাপতি মোঃ ইমন হোসেন। আটকের সময় তাদের হেফাজত থেকে রেলওয়ে কাটার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে বিএনপির চলমান হরতাল-অবরোধের অংশ হিসেবে দুর্বৃত্তরা গাজীপুরের শ্রীপুরে বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে ফেললে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে একজন নিহত ও ১২ জন আহত হন। এতে এ রুটে ২৬ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, রেললাইনে নাশকতা সৃষ্টি করে সাধারণ জনগণের মাঝে ভীতি সঞ্চার ও ব্যাপক প্রাণনাশের পরিকল্পনা অনুযায়ী যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. ইখতিয়ার রহমান কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি কবিরকে বলেন, দলীয় উচ্চপর্যায় থেকে বড় কিছু করার চাপ আছে। এরপর মো. ইখতিয়ার রহমান কবির আজিমুদ্দিন কলেজের ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তোহা ও গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরিকল্পনা অনুসারে তারা রেললাইন কাটার যাবতীয় সরঞ্জামাদি ঢাকার নবাবপুর মার্কেট থেকে ও গাজীপুর থেকে গ্যাস সিলিন্ডার কেনে।
আসাদুজ্জামান আরও জানান, ১২ ডিসেম্বর তোহা ও মাসুম ইমনের বাড়ি থেকে রেলওয়ে কাটার সরঞ্জাম নিয়ে গাজীপুরে যান। একই দিন কবির ও ইমন কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে জয়দেবপুর রেলস্টেশনে পৌঁছান। মাইক্রোবাস নিয়ে স্টেশনে অবস্থানরত তোহা ও মাসুম তাদের সঙ্গে রেললাইন কাটতে রওনা হন।
তিনি জানান, পথে বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় তারা। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা মাইক্রোবাসটি বাঁখারিয়া এলাকার একটি জঙ্গলের পাশে রেখে সব সরঞ্জামসহ হেঁটে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে দুজনকে পাহারায় রেখে অন্যদের সহায়তায় ভোর ৩ থেকে ৪টার মধ্যে রেললাইন কেটে ফেলেন ইমন। কাজ শেষে তারা গ্যাস সিলিন্ডার দুটি সেখানে রেখে অন্যান্য সরঞ্জামসহ গাড়িতে ফিরে যায়। ঘটনার দুই দিন পর কবির চকবাজার এলাকায় ইমনের সঙ্গে ফোনে দেখা করে এবং তাকে তিন হাজার টাকা দিয়ে আত্মগোপনে যেতে বলে।
প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও বনশাল এলাকায় গাড়ি পোড়ানোর পেছনে তিনিই মূল হোতা ও মূল পরিকল্পনাকারী বলে জানিয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার। তিনি এই এলাকায় অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা, নির্দেশনা এবং অর্থায়নের 8টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
এছাড়াও বনশাল থানা এলাকায় একটি বাসে আগুন দেওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতার করা হয়। জামাল হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ইখতিয়ার রহমান কবিরের নামও উঠে এসেছে।