সম্প্রতি ভৈরবে রেল দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পরও দেশে না ফেরায় সপরিবারে মালয়েশিয়ায় থাকা রেলমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এমন অভিযোগ করেন। শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন স্পিকার ড.
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘রেলমন্ত্রী সপরিবারে মালয়েশিয়ায়, রেল সচিবও সপরিবারে চীনে। ব্যস, সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণ মন্দ নয়। কিন্তু এত বড় দুর্ঘটনা আশা করছিলাম, এত মানুষ মারা গেল, নিশ্চয়ই রেলমন্ত্রী দ্রুত ফিরে আসবেন। কিন্তু আসেননি। যেখানে ভারতে জওহরলাল নেহরুর সরকারের তৎকালীন রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের পদত্যাগের সংস্কৃতি নেই।
চুন্নু ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।
জাপা সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘যারা তদন্ত করছেন তাদের প্রতিবেদন দিনের আলো দেখবে না, কারণ এতে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও জড়িত থাকবেন। তাই তদন্ত প্রতিবেদন কী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি যা বলেছি তা যদি সত্য হয়, তাহলে অন্য কোনো বিভাগকে তদন্ত করতে হবে।”
বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এই দুর্ঘটনায় লোকোমাস্টার ও সিগন্যাল ম্যানকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা উচ্চপর্যায়ের বা যারা পিছিয়ে থাকে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে।
তিনি জানান, ভাঙা রেলের মেয়াদ ছক ঠিক করতে গত রোববার চট্টগ্রাম থেকে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। টার্ম টেবিল ভেঙে যাওয়ায় ট্রেন ঠিকমতো চলাচল করছে না বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। যে ইঞ্জিনগুলো মালবাহী ট্রেন চালায় সেগুলো হলো Pol-2I, তাই পেছনে কিছু দেখা যায় না। টার্ম টেবিল না থাকায় ট্রেনটি ঘোরানো যায় না, তাই পোল-২ ইঞ্জিন দিয়ে মালবাহী ট্রেন চালানো হয়। ঢাকাগামী যাত্রীবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দেওয়া মালবাহী ট্রেনটি চালাচ্ছিলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম।’
চুন্নু আরও বলেন, ‘যে ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালাচ্ছিলেন সেটি এতই পুরনো যে তার সামনে সিগন্যাল দেখা যাচ্ছিল না, সিট বেশ দূরে, অনেক দূর থেকে সিগন্যাল দেখতে হয়। তাছাড়া মালবাহী ট্রেনের ডিস্ট্রিবিউটর ভালভ কাজ করেনি, জরুরি ব্রেকও কাজ করেনি। তাই সে ব্রেক করল কিন্তু ট্রেন থামল না। একটা দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু আগেই জানানো হয়েছিল- টার্ম টেবিলটি অনেক দিন ধরে নষ্ট, তাই ইঞ্জিন ঘোরানো যাচ্ছে না। তাই দ্রুত মেরামতের আবেদন জানানো হলেও তা করা হয়নি। তাহলে লোকোমাস্টারকেই কি দোষ দেওয়া যায়? কেন তাকে একা শাস্তি দেওয়া হবে?’