Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / রূপ-যৌবনকে পুঁজি করে করেন ৮ বিয়ে, হলো না শেষ রক্ষা

রূপ-যৌবনকে পুঁজি করে করেন ৮ বিয়ে, হলো না শেষ রক্ষা

বর্তমান সময়ে বিবাহ-বিচ্ছেদের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, যা দিনদিন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই অভিযুক্ত হচ্ছেন বেশি। তবে আইনগতভাবে নারীদের অধিক সুবিধা দেওয়ায় বিচ্ছেদের পরিমান অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। এদিকে অনেক নারী রয়েছেন যারা নিজেদের রূপ-যৌবনকে ব্যবহার করে একের পর এক পুরুষদের সাথে বিয়ে নিয়ে প্রতারণার খেলায় মেতে উঠেছে এবং হাতিয়ে নেয় পুরুষদের অর্থ ও সম্পদ। তেমনই একটি ঘটনায় খুলনার বহুল আলোচিত সুলতানা পারভীন নীলা বৃষ্টিকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

বিয়ের নামে ফাঁদে ফেলে একাধিক পুরুষকে নিঃস্ব করা বৃষ্টিকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার সুলতানুল আলম বাদলের মেয়ে সুলতানা পারভীন নীলা ৮ টি বিয়ে করেন।

সোমবার নীলা ঢাকার ১৪ নম্বর আদালতে হাজির হয়ে জালিয়াতির মামলায় জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মইনুল হোসেন তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপর আসামি তার বড় ভাই শফিকুল আলম বিপ্লবকে আদালত জামিন দিয়েছেন।

নীলার সাবেক ৭ম স্বামী এম রহমানের দায়েরকৃত মামলার আইনজীবী ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট ওয়াদুদ শাহীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ডিআইডি ঢাকার এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, বহুবিবাহে আসক্ত সুলতানা পারভীন নীলা এ পর্যন্ত ৮ জনের বেশি পুরুষকে বিয়ে করেছেন। ঢাকার আদালতে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন তার ৭ম স্বামী এম রহমান। ওই মামলার দায়িত্ব পায় ঢাকার সিআইডি। দীর্ঘ তদন্ত শেষে চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

তিনি বলেন, নীলার বাড়ির ঠিকানা ঠিক নেই। প্রতিবারই একে অপরকে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করে। একেক সময় একেকজনকে একেক পরিচয়ে প্রতারণা করে বিয়ে করে। এভাবে মোট ৮টি বিয়ে করে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

নীলার একাধিক প্রাক্তন স্বামী জানান, শারীরিক গঠন ও রূপ-যৌবন-ই নীলার প্রধান সম্পদ। সেটাকে পুঁজি করে তিনি ধনী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিয়ের নামে ফাঁদে ফেলেছেন। আর হাতিয়ে নিয়েছেন বহু অর্থ-সম্পদ। পরে তাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যা”/তন ও যৌতুকের দাবিতে একাধিক মামলা করে তাদের নিঃস্ব করে দেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সম্পর্কের জের ধরে চেক চুরি করে অন্য মহিলার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে।

একাধিক অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুলতানা পারভীন নীলা ৮টিরও বেশি বিয়ে করেছেন। তার ব্যবসা হল বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীকে ছেড়ে যৌতুকের টাকাসহ তার কাছ থেকে বাড়ি ও গাড়ি হাতিয়ে নেওয়া। তার প্রধান টার্গেট ধনী, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ কর্মচারী এবং প্রবাসী পুরুষ। প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করার পর সে ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং টার্গেট করা পুরুষদের তার শরীরের সৌন্দর্য ও কথার মোহে ফাঁ”দে ফেলে।

তদন্তে জানা যায়, সুলতানা পারভীনের প্রথম বিয়ে হয় ১৯৯৯ সালে মাদারীপুর জেলার হরিকুমারিয়া গ্রামের জাপান প্রবাসী আব্দুল হাকিম সিকদারের ছেলে শাহাবুদ্দিন সিকদারের সাথে। নীলার বয়স তখন ১৫ বছরের কম। কিছুদিন পর স্বামীর বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে চলে যায়। শাহাবুদ্দিন শিকদার তার উচ্ছৃঙ্খল জীবন ও মালামাল চুরির বিষয়ে মাদারীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নং- ৭৩৮, তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯। যদিও ২০০১ সালে তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে নীলার।

নীলার দ্বিতীয় বিয়ে হয় ২০০৫ সালের ৬ মে খুলনা মহানগরীর শেরেবাংলা রোডের মোঃ মকবুল হোসেনের ছেলে এসএম মুনির হোসেনের সাথে। এরপর নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে এক লাখ টাকার কাবিননামায় মুনির হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই নীলার বিশৃঙ্খল জীবনযাপন ও আক্র”ম/ণাত্মক আচরণের শিকার হন স্বামী মুনির। একপর্যায়ে নীলা স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। এ ঘটনায় একই বছরের ১০ ডিসেম্বর তাকে তালাক দেন মুনির হোসেন। তবে পরবর্তীতে সুলতানা পারভীন নীলা ২০০৬ সালে মনির হোসেনের বিরুদ্ধে পারিবারিক আদালতে নারী ও শি/”শু নি’/’র্যাতনের মামলা করেন।

ঘটনার পরপরই সুলতানা পারভীন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ২০০৮ সালের এপ্রিলে আবার নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করেন এবং শহরের খালিশপুর ওয়ারলেস ক্রস রোডের প্রয়াত আব্দুল মান্নানের ছেলে ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে বিয়ে করেন। তবে শর্ত থাকে নীলা বিয়ের পর তার আত্মীয়ের মাধ্যমে বনিকে ইতালি নিয়ে যাবে। শর্ত মোতাবেক বিয়ের পর তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কিছুদিন যেতে না যেতেই নীলার প্রতারণা প্রকাশ পেতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের বিচ্ছেদও হয়ে যায়।

এ ঘটনায় নীলা কুমারী হওয়ার ভান করে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় তার স্বামী শেখ মইনুল আরেফিন ২০১০ সালের ডিসেম্বরে নীলার বিরুদ্ধে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন। বনির সঙ্গে মামলা চলাকালীন ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের ইফতেখার নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন নীলা। সেখানেও তার দাম্পত্য জীবন টেকেনি। এক পর্যায়ে ইফতেখার আমেরিকা চলে যান। ২০১২ সালে নীলা বিয়ে করেন বাগেরহাটের বাসিন্দা কামাল হোসেনকে, ২০১৭ সালে ইতালি প্রবাসী মাদারীপুরের মোহাম্মদ আজিমকে, ২০১৮ সালে খুলনার এম রহমানকে এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে খুলনা মহানগরীর নাজির ঘাট এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে মো. আব্দুল বাকী’র সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

নীলার সাবেক স্বামী মোঃ আব্দুল বাকী বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে চেক ও টাকা চুরির মামলা করেছেন। এছাড়াও, নীলা সিরাজগঞ্জে থাকাকালীন ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি না করায় আরেক স্বামীকে নারী নির্যা”/তন মামলার হুমকি দেয় এবং তার জীবনের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২ মে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

মহানগরীর নাজিরঘাট এলাকার প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে মো. আব্দুল বাকী সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে তার প্রতারণা ও জালিয়াতিস নানা অপরাধ তুলে ধরে তাকে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।

তবে বৃষ্টিকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি সংস্থা পুরুষ কর্মীরা। এদিকে বৃষ্টি দাবি করেছেন, তাকে উদ্দেশ্যগত ভাবে মানহানি করা হচ্ছে। তিনি তার সাবেক স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং বলেন তাদেরই অপরাধ ছিল, আমি নির্দোষ।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *