বুয়েটের মেধাবী ছাত্র ফারদিন নূর পরশ নিখোঁজ হওয়ার পর তার নিথর দেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে দেখতে পায় সেখানকার স্থানীয় কিছু মানুষ। এরপর তারা বিষয়টি নিয়ে নৌপুলিশকে খবর দেয়। নৌ-পুলিশ তার দেহটি উদ্ধার করে থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেন। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। ফারদিনের বাবা বাদী হয়ে ঘটনার দিন সাথে থাকা ফারদিনের বান্ধবী আয়াতুল্লাহ বুশরাসহ আরো বেশ কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এরপর ঘটনা তদন্তে নামে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি এলাকার ভেতরেই বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ফারদিন নূর পরশকে হ”/ত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় রায়হান গ্রুপের প্রধান রায়হানসহ ৮-১০ জন অংশ নেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ফারদিনকে জি”ম্মি করে টাকা আদায় করা। কিন্তু ফারদিন প্রতিবাদ করলে রায়হান গ্রুপের লোকজন তাকে প্রাণে মে”/রে ফেলে। এরপর চনপাড়ার শাওন তার নিথর দেহ একটি প্রাইভেটকারে করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। এদিকে এই ঘটনায় জড়িত রায়হানসহ ৪ জনকে আটক করেছে র্যাব। এছাড়া প্রাইভেটকারের মালিক শাওনকে ইতোমধ্যে আটক করেছে র্যাব। র্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি সূত্র দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানায়, রায়হান ইতোমধ্যে হ”/ত্যার কথা স্বীকার করেছে। কীভাবে তাকে নিথর করা হয়েছে তাও বর্ণনা করেছেন তিনি।
এদিকে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা বলেন, আমার ছেলে কখনো সিগারেট খায়নি, সে কিভাবে ফেনসিডিল খাবে? তিনি বলেন, এটি এমন কোনও ঘটনা নয় যে হুটহাট করে মা”রামা/রির কারণে এ হ”/ত্যাকাণ্ড ঘটেছে।। যারা কোনো পরিকল্পিত ঘটনা ঘটায়, তারা নিশ্চিতভাবেই আটঘাট বেঁধেই ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করে। ছেলেকে নি”র্যা/তন করে নিথর করা হয়। আমি আরও আশা করি আইন প্রয়োগকারী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তারা এই রহস্য উদঘাটনে এবং সত্য ঘটনা উদঘাটনে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি এটা হ”/ত্যাকাণ্ড। এই ঘটনা এখনও পরিকল্পিত. আমার ছেলে কোনো ধরনের নিষিদ্ধ দ্রব্যের সঙ্গে জড়িত নয়। নারায়ণগঞ্জের চনপাড়ায় তার অবস্থান শনাক্ত হলে কেউ তাকে ফাঁদে ফেলে সেখানে নিয়ে গেছে। ভয় দেখানোর পর তাকে নি”/র্যাতন করে নিথর করা হয়। যদি তার অবস্থান নারায়ণগঞ্জ হয়, তাহলে আমি বলব সে নিজে কখনো সেখানে যেতে পারে না। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনোভাবে আটকা পড়েন তিনি। তাকে আটক করে তার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।
এদিকে সোমবার সকালে বুয়েট শহীদ মিনারে ফারদিনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। সেখানে ফারদিনের বাবা অংশ নেন। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু গণমাধ্যম বিষয়টিকে অন্য দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করছে। ফারদিনের নিথর হওয়ার ঘটনায় নিষিদ্ধ দ্রব্য জড়িত থাকার খবর সম্পর্কে তার বাবা বলেন, যে ছেলে ধূ’মপান করে না, সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না, সে কীভাবে ফেনসিডিল খাবে? এটা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। যেসব মিডিয়া ফারদিনের নিষিদ্ধ দ্রব্যের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছে তারা তদন্তকে বিভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। রামপুরা থেকে চনপাড়া যাওয়ার সহজ পথে মেরাদিয়া দিয়ে না গিয়ে ফারদিন এত ঘুরে কেন সেখানে যাবে? ফারদিনের প্রয়ানকে মেধা ও মননের ওপর আঘাত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মাথা ও বুকে আ”ঘাত করে ফারদিনকে নিথর করা হয়েছে। কারণ যারা এটা করেছিল তারা তার মেধা ও মননকে ধ্বং”স করতে চেয়েছিল। আমার ছেলের ব্রেনে আ”ঘাত করা হয়েছে কারণ সে মেধাবী।
এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের ওপর শতভাগ আস্থা রাখতে চান ফারদিনের বাবা বলেন, ‘আমি চাই তারা দ্রুত রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনুক, যাতে কেউ রেহাই না পায়।’ বুয়েটের মেধাবী ছাত্র ফারদিন নূর পরশ নিখোজ হবার পর গত ৭ নভেম্বর সোমবার শীতলক্ষ্যা নদীতে তার নিথর দেহ পাওয়া যায়। সেখানকার স্থানীয় কিছু মানুষ তার দেহটি দেখতে পেয়ে নৌ-পুলিশকে খবর দেয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক, তার পরিবার ও সহপাঠীরা দাবি করে আসছেন যে, ফারদিনকে গুরুতর আঘাত করার মাধ্যমে নিথর করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের অনেকগুলো চিহ্নও পাওয়া গেছে।