কক্সবাজারে আলোচিত সিনহার প্রাননাশের মামলার অন্যতম আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করার মামলার রায় দেয়া হয়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে তাদের ঐ রায় পড়ার সময় উপস্থিত ছিলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার স্ত্রী চুমকি কারণ। রায় পড়ার সময় তাদেরকে সেখানে মন মরা অবস্থা দেখা যায়। সেই সময় সেখানে সাংবাদিকসহ তাদের আত্মীয় পরিজন উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার রায় পড়ার সময় প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির চোখ জলে ভরে গেছে। এ সময় দুজনকেই খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।
বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রদীপকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার স্ত্রী চুমকিকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় প্রদীপ ও চুমকিকে আদালতে আনা হয়।
চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের কক্ষ রয়েছে। প্রদীপকে আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। তার স্ত্রী আদালতের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন।
বেলা ১১টা ০৭ মিনিটে বিচারক আদালত কক্ষে এজলাসে এসে রায় পড়া শুরু করেন। বিচারক যখন রায় পড়া শুরু করেন, তখন দেখা যায় প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রীর চোখ পানিতে টলমল করছে। দুজনই বেশ বিম’র্ষ ছিলেন।
রায়ের পর পুলিশি পাহারায় প্রদীপকে প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রদীপ বলতে থাকেন, ‘আমি দুর্নীতি করিনি। আমি দুর্নীতি করিনি।’
১০ মিনিট পর প্রদীপের স্ত্রী চুমকিকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। তার সঙ্গে দেখা করতে আসা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কয়েকজন আত্মীয় তাকে সান্ত্বনা দেন।
রায় ঘোষণার পর প্রদীপের আইনজীবী সমীর দাশগুপ্ত সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর আমরা হাইকোর্টে আপিল করবো।
মামলাটি পরিচালনা করেন দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক। রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে তিনি গনমাধ্যমকে বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করছি, উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে।
২৩ আগস্ট, ২০২০ তারিখে, দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। গত বছরের ২৬ জুলাই প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।
উল্লেখ্য, সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ অনেককে বিভিন্নভাবে ভয়ভী”তি দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ ওঠে। এইভাবে তিনি বিপুল পরিমান অর্থ সম্পদ গড়ে তোলেন বলে অনেক ভুক্তভোগী দাবি করেন। তারা জানিয়েছেন, সাবেক ওসি প্রদীপ এই এলাকায় অনেক নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে লাখ লাখ টাকা দাবি করতেন, কিন্তু অনেকের নিকট থেকে টাকা নিলেও তাদেরকে তিনি ছাড়েননি।