Monday , December 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের দেখে মনে হয় তারা আট নয় মাসের গর্ভবর্তী: গোলাম মোল্লা রনি

রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের দেখে মনে হয় তারা আট নয় মাসের গর্ভবর্তী: গোলাম মোল্লা রনি

শ্রীলঙ্কার ( Sri Lanka ) সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে। দেখা যাচ্ছে, তার ভাই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এমনকি নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রীসহ বেশিরভাগ মন্ত্রীই তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। বিরোধী দলগুলো জানিয়েছে, তারা উপনির্বাচনে অংশ নেবে না। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার ( Sri Lanka ) অর্থনীতি ও জনগণ থমথমে অবস্থায় রয়েছে। এটি কি অত্যধিক বৈদেশিক ঋণ, দুর্নীতিগ্রস্ত বড় প্রকল্পে অর্থায়ন, বা রপ্তানি আয়ের অভাব, রেমিট্যান্স বা বিদেশী বিনিয়োগের কারণে, অন্যান্য অনেক দেশের মতো এটি একটি বিতর্কের বিষয়। সে দিক দিয়ে বাংলাদেশ ও কম যায় না এমনি ধরনা অনেকের। সম্পতি গোলাম মোল্লা রনি ( Golam Mollah Rony ) তার যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে বাংলাদেশের ( Bangladesh ) বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি পোষ্ট করেন যে পোষ্ট বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

তিনি তার পোষ্টে লেখেন. শ্রীলঙ্কার ( Sri Lanka ) সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশে যে অদ্ভুত উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে তা আমি কখনো দেখিনি বা শুনিনি। এই সংক্ষিপ্ত জীবনে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি এবং ইতিহাসের প্রথম বিজয় দিবস দেখেছি। আমি ১৯৭৫ সালের আগের ঘটনা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার আগের ঘটনা দেখেছি। খন্দকার মোশতাকের ( Khandaker Mushtaq ) শাসন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ( Bangladesh ) প্রথম সামরিক শাসন দেখেছি। বাংলার ইতিহাসের কিংবদন্তি জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি জিয়ার উত্থান, কর্মকাণ্ড ও নৃ/ শংস মৃ/ ত্যু আমরা দেখেছি। এরশাদের উত্থান-পতন, নব্বই-পরবর্তী বিএনপি-আওয়ামী লীগের ক্ষমতার রাজনীতির উত্থান-পতন, কু/ খ্যাত ওয়ান-ইলেভেনের ভিলেনদের উত্থান-পতন। আমার জন্মের আগে, আমি কল্পনার জগতে একটি দৃশ্য আঁকতে আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, জানতাম এবং চেষ্টা করেছি।

যদি আমি আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত উল্লিখিত ঘটনার সাথে যুক্ত করি তবে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে এই সমস্ত ঘটনার মধ্যে দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, রোমাঞ্চ, লাভ-ক্ষতি বা ক্ষতি সহ বিভিন্ন ধরণের ট্র্যাজেডি-কমেডি রয়েছে। বঞ্চনা আতঙ্ক ও সাসপেন্স ছিল। তাহলে কেন অতীতের সেই উপাখ্যানগুলিকে শ্রীলঙ্কার বর্তমান ঘটনার পরিধিতে চাপা দেওয়া হচ্ছে। একদল লোক বলছে, বাংলাদেশের পরিণতি শ্রীলঙ্কার চেয়েও খারাপ হবে। আরেক পক্ষ বলছে, শ্রীলঙ্কার ঘটনা বাংলাদেশে কখনো ঘটবে না। কারণ এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। এর জবাবে বিরোধীরা বলছেন, যেখানে বঙ্গবন্ধু নিজেই নিয়তির মূল্য দিতে গিয়ে নির্মম পরিণতি ভোগ করেছেন, সেখানে তার পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টার চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না।

সুবে বাংলায় শ্রীলঙ্কা নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনার মূল কারণ হল, সেখানে একটি কর্তৃত্ববাদী ও কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক পরিবারের নির্মম ও অপমানজনক পতন ঘটেছে। শুধু এই পরিবারই ভেঙে পড়েনি, তাদের দোসর, সহযোগী, দালাল ও সুবিধাভোগীদের নির্মম পরিণতি নাটক-সিনেমার গল্পকেও ক্ষুণ্ন করেছে। এমনকি গল্প-উপন্যাসেও কোনো কবি-সাহিত্যিক এতটা রাজনৈতিক অবক্ষয়ের বাস্তব প্রেক্ষাপট রচনা করতে পারেননি। ফলে শ্রীলঙ্কার বাজার-ঘাট, নদী-পুকুর-ডোবা কিংবা পাহাড়-পর্বত-বনে স্বৈরাচারী রাজাপাকসে পরিবারের প্রকৃত দুর্দশা খালি চোখে দেখা যায়। ডুমসডে দৃশ্যত একটি ঐক্যবদ্ধ খুন্দিয়ার অনুঘটক এবং পরবর্তীকালে একটি গ্যালাকটিক শক্তি হিসাবে তাদের আবির্ভাব।

আমাদের দেশের মজা-প্রেমী মানুষ যেমন সহজে কোনো কারণ ছাড়াই আনন্দে লাফিয়ে উঠতে পারে, তেমনই তারা সহজেই কোনো পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে হঠাৎ করে কোনো রকম ভেদাভেদ ছাড়াই রেগে গিয়ে সবচেয়ে নৃশংস ঘটনা ঘটায়। আমাদের দেশে গ/ ণপিটুনির মতো নি/ ষ্ঠুর ঘটনা, গণপিটুনির মতো ঘটনা অন্যান্য দেশে অস্বাভাবিক নয়। গ্রামবাসীর হাতে সাধারণ চোর ধরা পড়লে শত শত লোক জড়ো হয়ে চোরকে গণপিটুনি দিতে থাকে। এ ছাড়া সত্তর দশকে এমনকি আশির দশকেও গ্রামীণ বিচারে কিছু কলঙ্কিত চোর বা ডাকাতকে চোখ বেঁধে বিংগ্রাম থেকে অভিজ্ঞ লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যারা তালের কাঁটার সাহায্যে চোর-ডাকাতদের চোখ নির্ভুলভাবে বের করে দিতে পারে। পুলিশ কোনো ঝামেলায় পড়েনি। নান্দাইলের একজন ব্যক্তি পাকিস্তানে ভ্রু তোলার জন্য বিখ্যাত ছিলেন এবং হুমায়ূন আহমেদ সেই গল্পের উপর ভিত্তি করে একটি নাটকও লিখেছেন।

বাংলাদেশের মানুষের উল্লেখিত অভ্যাসের কারণে বিভিন্ন গ্রামে প্রায়ই অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। এক সময় ঢাকার সাভার এলাকায় গরু চোরদের উপদ্রব ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। গরু চোরদের ওপর মানুষ ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় একবার এক গরু চোর জনতার হাতে ধরা পড়ে। জনগণ চোরকে গণপিটুনি দিয়ে নিথর করে। চোর তখন চোরকে টুকরো টু/ করো করে কে/ টে চোরের মাংস গরুকে খাওয়ায় এবং জনগণের বিক্ষুব্ধ অনুভূতির সমর্থনে সাভারের অনেক গরু সেদিন ঘাসসহ চোরের মাংস খেয়েছিল।

আমাদের দেশের শান্তিপ্রিয় জনতা বিনা কারণে সময়ে সময়ে বিক্ষুব্ধ হয়। তারা যেমন বিনা কারণে অন্যের কান্না দেখতে পায়, তেমনি অন্যের হাসি দেখলেও কাঁদতে পারে। আমি বলতে পারব না যে তারা যেভাবে জনসাধারণের পাশে বসেছে বা পাশে দাঁড়িয়েছে তা শ্রীলঙ্কায় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এদেশের মানুষেরও রয়েছে নি/ ষ্ঠুরতার নজিরবিহীন ইতিহাস। গত বছর এক পর্যায়ে উত্তরবঙ্গের লোকেরা একটি মসজিদ থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করে বলে অভিযোগ। তারা লোকটিকে পিটিয়ে হত্যা করে। এতে তাদের ক্ষোভ কাটে না। তারা প্রায় ১০,০০০ লোককে জড়ো করে এবং দুর্ভাগ্যবান ব্যক্তির মৃ/ তদেহকে একটি পাবলিক হাইওয়েতে ছাই করে দেয়। হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতার মুখে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের নীরব দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।

আমাদের দেশে বিয়েবাড়িতে মারামারি হয়। পূজা-পার্বণ থেকে শুরু করে নানা উৎসবে মারামারি, খেলাধুলা। চেয়ারে বসা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাবার বিতরণ, কোনো ক্ষেত্রে বাতাস চলাচল নিয়ে শুরু হওয়া ঝগড়ার জের ধরে শত শত মানুষ ঢালে ও রাস্তায় আদিম কায়দায় মারামারি শুরু করে। এদেশের গ্রাম বাংলায় এখনো এক শ্রেণীর লোক আছে যারা গাঁজা সেবনে আসক্ত এবং আজেবাজে কথা বলে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তাকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্ক রয়েছে। মাদকাসক্ত একজন মানুষের ওপর জ্বীনের কবলে পড়েছে মানুষ।

আজকের শিরোনামের বৈধতা নিয়ে আলোচনা করার আগে আমি আমাদের সংস্কৃতি ও চর্চা সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে চাই কারণ আমাদের দেশের শ্রীলঙ্কা হওয়া কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয় বা এক কোটি ৩৩ বছর চেষ্টা করেও শ্রীলঙ্কা আমাদের বাংলাদেশ হবে না। শত চেষ্টা করেও বাংলাদেশের মতো রেকর্ড গড়তে পারেননি শ্রীলঙ্কার পতিত প্রধানমন্ত্রী। আমাদের দেশে রাতের ভোট, বিনা ভোটে ১০ লাখ কোটি টাকা পাচার, বালিশ কেলেঙ্কারি, পর্দা কেলেঙ্কারি, লাখ লাখ টাকার কলা গাছ কেনা, খিচুড়ি রান্না শেখার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের মতো হাজারো বিশ্ব কাঁপানো কেলেঙ্কারি তৈরি হয়েছে। , ইত্যাদি। রাজাপাকসে এবং তার ভাই গোটাবায়াকে যখন শ্বাসরোধ করা হয়েছিল, তারা মুহূর্তের মধ্যে মৃগীরোগের শিকার হবে, মাটিতে পড়ে যাবে, কাঁপবে এবং মারা যাবে।

২০১৪ এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশের দুটি নির্বাচন কমিশনের মতো একই স্তরের নির্বাচন কমিশন গঠন করার সাহস রাজাপাকসের কখনই ছিল না। রাজাপাকসে যদি পচা বা পচা গন্ধ পেতেন, তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তার দ্বারা নিযুক্ত অন্যান্য কমিশনাররা হতেন না। বাংলাদেশের উপরোক্ত কমিশনের বীর পুরুষদের মতোই সাহসী। রাজাপাকসের পতনের কোনো একটি কারণ হিসেবে তাকে দায়ী করতে চাইলে তাকে অকৃতজ্ঞ ও কৃপণ শিশু বলতে পারেন। কারণ পিতা-মাতার সুনামের জন্য তিনি ক্ষমতার চেয়ারে বসে কিছুই করেননি। ফলে তার বাবা-মায়ের নামও আমরা জানি না। ফলস্বরূপ, পরিণতির জন্য সন্তানদের তাদের পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

তাদের প্রায় সবাই গর্ভবতী বলে মনে হয় এবং অর্থ, ক্ষমতা এবং দুর্নীতির প্রভাবের ত্রিত্বে তাদের পেট এতটাই ফুলে গেছে যে মনে হয় সবাই গর্ভবতী। এর মধ্যে তিন-চারটি অজ্ঞাত ভ্রূণ নড়ছে। এবং তারা যেভাবে আট থেকে নয় মাসের গর্ভবতী পেট নিয়ে খোলামেলা রসিকতা করে তা শ্রীলঙ্কার কোনো দুষ্টু বিনোদনকারীর পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে আমরা বুঝতে পারি যে শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে পরিবার রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, দলীয় দুর্নীতি, ব্যক্তিগত দুর্নীতি, সরকারী দুর্নীতি ইত্যাদিতে রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের গর্ভধারণ করার মধ্যে কতটা নির্বোধ ছিল তার পতনের মাধ্যমে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে আমরা যে দৃশ্য দেখছি তা আমাদের জন্য খুবই শিশুসুলভ। সেখানে এক বা একাধিক সংসদ সদস্যকে বিবস্ত্র করা হয়েছে। উলঙ্গ হয়ে ওই সাংসদরা আবার ভদ্রলোকের মতো হাত ঝুলিয়ে রাস্তায় হাঁটলেন। এটা কি আমাদের দেশে সম্ভব! আমাদের দেশে ডাকাতি, গণপিটুনি, দৌড়াদৌড়ি, পালানো, জোরে জোরে কান্নাকাটি, ভয়ে দাঁত কিড়মিড় করা, অনেকের পাতলা মল শুরু করা, কাপড় নষ্ট করার মতো ঘটনা ঘটেনি। তাই শ্রীলংকার বাংলাদেশ কেমন হবে বা বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো ঘটনা কীভাবে ঘটবে তা আমার মাথায় নেই।

বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মত হবে এমন মন্তব্যের বিষয়ে অবগত হয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, শ্রীলঙ্কার ইস্যুতে বিরোধী দলের মাননীয় নেত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এটা বাস্তব, কিন্তু আমি তাকে একটা কথা বলতে চাই যে আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আমাদের উন্নয়নের জন্য সবসময় আমাদের ঋণ সময়মতো পরিশোধ করেছি। এর আগে দেশের তিনটি প্রধান খাত- রেমিটেন্স, পোশাক ও কৃষি উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, আমাদের তিন লাখ কোটি টাকা ঋণ আছে, এগুলো শোধ করতে হবে। বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কার মত হবে না বলেও জানান আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা।

About Nasimul Islam

Check Also

কোনো দলকে বাদ নয়, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি

সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দিয়ে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *