অনেকদিন ধরে জল্পনা শুরু হয়েছিল কে হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। অবশেষে জানা গেল, কে আসছেন এই পদে। প্রথমদিকে আলোচনায় উঠে এসেছিল ৩ জনের নাম। তবে তাদের তিনজনের কাউকে রাখা হয়নি। এদিকে সংসদে আ.লীগের সংসদ সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় আ.লীগ থেকে যাকে মনোনয়ন দিবে তিনিই হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।
দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। যেহেতু তিনি রাষ্ট্রপতি পদে একমাত্র প্রার্থী, তাই আর কোনো ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।
রোববার বিকেলে দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ, তিনি আমাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। এ মুহূর্তে আমার প্রতিক্রিয়া এটুকুই।’
সব জল্পনা-কল্পনাকে ভুল প্রমাণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের আগে সবার চোখ ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে। নতুন রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত অনেকের মধ্যেই আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু সব আলোচনা ছাপিয়ে অনেকটা চমকের মতো এসেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নাম।
আর কোনো প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার অপেক্ষা। বিধান অনুযায়ী আগামীকাল প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বলে গণ্য হলে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এখন শুধু প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পালা।
নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রোববার বিকেল চারটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া কারও মনোনয়নপত্র জমা হয়নি। আগামীকাল সোমবার বিকেলে প্রার্থী বাছাইয়ের পর তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সভাপতি পদে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র জমা দেন।
নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার আগে সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল গত মঙ্গলবার বৈঠক করে দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়। আজ সকালে দলীয় সভানেত্রীর কাছ থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেন।
দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।
সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেয়নি। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১১ ডিসেম্বর বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেন। ফলে সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী, প্রার্থী একজন হলে এবং তার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বৈধ বলে গণ্য হলে নির্বাচন কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। সংসদে আর ভোটের প্রয়োজন হবে না। নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামীকাল প্রার্থী বাছাইয়ের দিন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে একমাত্র প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলায় স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রয়াত হওয়ার পর সাহাবুদ্দিনকে কারারু”দ্ধ করা হয়। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (জুডিশিয়াল) বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিথর করার মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি একটি ইলেক্টোরাল কলেজ দ্বারা নির্বাচিত হন, যা সংসদ এবং স্থানীয় সরকার পরিষদের সদস্যদের নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশে নির্বাচন পরিচালনার তত্ত্বাবধানের জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন দ্বারা নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে, প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেতে হয়। প্রথম রাউন্ডের ভোটে কোনো প্রার্থী বেশি ভোট না পেলে, প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়।