জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বছর খানেক বাকি রয়েছে, এবং এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো তৃনমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত গোছানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারও সকল ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ শুরু করেছেন। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল অংশ নিবে না এমন ধনের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আজ (বুধবার) অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর বিকেলের দিকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন ধরনের তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় দলের স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। মির্জা ফখরুল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না বলে বিএনপি বিশ্বাস করে। রাস্ট্রপতি নিজেই বলেছেন নিয়ম পরিবর্তন করার ক্ষমতা তার নেই। এ কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। অর্থহীন কোনো সংলাপে বিএনপি অংশ নেবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নিবন্ধিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপি মনে করে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যতীত নির্বাচন কমিশনের গঠন নিয়ে সংলাপ শুধু সময়ের অপচয়।’
‘বিগত দুইটি নির্বাচন কমিশন গঠনের পূর্বে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিল। বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছেপেশ করেছিল। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচনকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে।’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা উল্লেখ করা হয়।
বিএনপির অভিযোগ, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেআইনি ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পর পর দুটো নির্বাচন কমিশনই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকার বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন কখনই স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না।’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সোমবারের ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন— ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
এদিকে বিএনপি দেশজুড়ে চলমান নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। কারন, তারা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না েমনটাই জানিয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে দল থেকে জানিয়েছে যদি কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে দলীয় প্রতীকে নয় স্বতন্ত্র হিসেবে ভিন্ন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারে। তবে আগামি সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে কিনা সে বিষয়ে বিএনপির তরফ থাকে বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ এবং নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তবেই নির্বাচনে যাবে এই দলটি।