রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান বর্জন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কোনো নেতা-কর্মী এ অনুষ্ঠানে সাংগঠনিকভাবে অংশ নেবে না।

সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে সংগঠনটি বলেছে, ‘মহান বিজয় দিবসের মতো একটি গৌরবময় দিনে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ গ্রহণ করা আমাদের নীতি ও গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায়ের পরিপন্থী।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করছে এবং এই দিবসে তার আয়োজিত অনুষ্ঠান বর্জন করছে।’

এদিকে, যান চলাচলসংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা, বিদেশি কূটনীতিক, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এবং খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে তাদের অনুপস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করা হচ্ছে।


সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, ফিরলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের সিদ্ধান্তসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং গণভোটের বিধান পুনরায় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন।

সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল এবং এটি সংবিধানের একটি মৌলিক ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। আদালত আরও বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছিল, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে পুরো সংশোধনী বাতিল করা হয়নি।

আদালত আরও উল্লেখ করেন, গণতন্ত্রই সংবিধানের মূল কাঠামো এবং সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই গণতন্ত্রের ভিত্তি। আদালতের মতে, জনগণের ক্ষমতায়নই সংবিধানের সৌন্দর্য, কারণ জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।

এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। রিট আবেদনকারী সুজনের পক্ষ থেকে সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া শুনানি করেন। বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল অংশ নেন। এছাড়া জামায়াতে ইসলামের পক্ষে অ্যাডভোকেট শিশির মনির এবং ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান শুনানি করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল। পাশাপাশি, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের বৈধতা নিয়ে রুল জারি করেন। এর আগে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ কয়েকজন নাগরিক রিট আবেদন করেছিলেন। আজকের রায়ের মাধ্যমে সংবিধানে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হলো।