তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ভারতের অবদান সত্ত্বেও রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার কাছে ‘চিরকাল কৃতজ্ঞ’ থাকতে পারে না। তিনি বলেন, “চিরকৃতজ্ঞ” থাকার যে বিষয়টি সেটার ধারণা কিন্তু ১৯৭১ সালে শোনা যায়নি, সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের কথা উত্থাপিত হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও চিরন্তন কৃতজ্ঞতা বলে কিছু নেই।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ (সোমবার) অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ ধরনের মন্তব্য করেন। আকবর আলি খান আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যক্তিগত কোনো রকম বন্ধুত্বের কোনো বিষয় নয়। এটা জাতির সঙ্গে জাতির বন্ধুত্বের বিষয়। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্বের একটি বিষয়। রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব তখনই হবে যখন আমাদের স্বার্থ অভিন্ন হবে। আর স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকলে চির কৃতজ্ঞতাবোধ কখনোই আর অব্যাহত থাকবে না।
তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন রয়েছে তাতে মানুষে মানুষে বিভেদ কমার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে বিভেদ বেড়েই চলেছে। এই বৈষম্য বেড়েছে গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে। এর একটি কারণ হচ্ছে, দেশে প্রচণ্ড দুর্নীতি চলছে, এই দুর্নীতির ফলে কালো টাকা এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের এখানে বৈষম্য বেড়েই চলেছে।
‘উদারনৈতিক গণতন্ত্র’ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা হলেও বাংলাদেশে তা ‘দুর্বল’ অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, উদারনৈতিক গণতন্ত্রে কেবল নির্বাচন হলেই চলবে না। একে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। সেখানে সিভিল সোসাইটির ভূমিকা থাকতে হবে, সেখানে আইনের শাসন থাকতে হবে। এই ধরনের বিষয়গুলো বাংলাদেশ এখনও দুর্বল।
দারিদ্র্যসীমার নিজে থাকা মানুষের সংখ্যা ৭০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনাকে ৫০ বছরে বাংলাদেশের ‘অকল্পনীয়’ অর্জন হিসেবে বর্ণনা করেন আকবর আলি খান। তিনি বলেন, আমরা যদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকসমূহ দেখি, তাহলে অবশ্যই আমাদের গর্ব করার কারণ রয়েছে। তবে দারিদ্র্য শুধু বাংলাদেশেই কমেনি, পৃথিবীর সব দেশেই কমেছে।
সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাফর ইমাম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ ইব্রাহিম বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সিজিএসের আয়োজনে বাংলাদেশের ৫০ বছর শীর্ষক রচনা প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বাংলাদেশে মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে একটি দৃঢ় পর্যায়ে রয়েছে এমনটি বলে হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ প্রতিবেশী দেশ ভারত দেখে না। তবে ভারত প্রতিবেশী দেশ হওয়ার কারনে দেশটির সাথে তালমিলিয়ে চলতে হয় বাংলাদেশকে। বিভিন্ন ধরনের বানিজ্যিক সুবিধা পাওয়া গিয়ে থাকে ভারতের নিকট থেকে যেটা বাংলাদেশের অর্থনীতি সক্রিয় থাকার একটি অন্যতম দিক। তবে অনেক বিষয়ে ভারতের নিকট নির্ভরতা থাকে বাংলাদেশের সেটা রাজনৈতিক সম্পর্ক থেকেই হাসিল করতে হয় সরকারকে।