সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে, যেটা গুরুতরভাবে নেতিবাচক। তবে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে বিভিন্ন যুক্তি দেখালেও মানুষের জীবিকা নির্বাহেও ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়েছে, যার কারণে নিম্নআয়ের মানুষের সবচেয়ে বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। তবে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে জ্বালানি তেল কম মূল্যে আমদানি করা গেলে, তা সমন্বয় করে বর্তমান মূল্য নির্ধারন করা হবে। এবার রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেলের বিষয়ে সুখবর পাওয়া গেল।
বাংলাদেশের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাবে রাশিয়া কিছু শর্ত দিয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এখন শর্ত পর্যালোচনা করছে। এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে।
সেগুলো নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। রাশিয়া কিছু শর্ত দেওয়ায় বিপিসি এখন প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, তারা ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৮ আগস্ট একটি বৈঠক করেছেন। বিপিসি মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক ও অপারেশন) মোস্তফা কুদরত এলাহীর নেতৃত্বে রাশিয়ার প্রস্তাবের শর্তাবলী এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
গত মে মাসে রাশিয়া বাংলাদেশকে অপরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ইস্টার্ন রিফাইনারির রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের ক্ষমতা নেই। ফলে বাংলাদেশ সেই প্রস্তাব নিয়ে এগোতে পারেনি। এবার রিফাইন্ড তেল বিক্রির প্রস্তাব এল রাশিয়া থেকে। সাশ্রয়ী মূল্যে দিতে চাই। প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি রাশিয়া থেকে তেল কেনার উপায় বের করার নির্দেশনা দেন।
জানতে চাইলে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. লোকমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘রাশিয়ার রোসনেফ্ট অয়েল কম্পানি সম্প্রতি বিপিসিতে পরিশোধিত তেল ক্রয়ের জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিপিসি বৈঠক করেছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাশিয়ান কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে জ্বালানি তেল কেনার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ‘
ইউক্রেন যু/”দ্ধের কারণে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে রাশিয়া থেকে পণ্য কেনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দেশের আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেনও বন্ধ রয়েছে। ফলে তাদের কাছ থেকে জ্বালানি তেল কিনলে দাম কেমন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাশিয়া এখন বিশ্বের সাথে তার নিজস্ব মুদ্রা রুবেলে ব্যবসা করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরএল-এর এমডি বলেন, “এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া। এটি নিয়ে আলোচনা করা হবে। মূল্য পরিশোধ, কার্গো, কার্গোভাড়া—এমন অনেক ইস্যু এর সঙ্গে যুক্ত। তাই বলা যায়, এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ’
রাশিয়া বাংলাদেশকে কত সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল দেবে জানতে চাইলে ইআরএলের এমডি বলেন, আমরা যে দামে বিভিন্ন দেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করি তার চেয়ে কম দামে জ্বালানি তেল দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে রাশিয়া। তবে এগুলো কতটা সাশ্রয়ী হবে তা তারা এখনো জানায়নি। আলোচনার কোনো এক পর্যায়ে তারা তা প্রকাশ করবেন।’
বিপিসি সূত্র বলছে, চীন ও ভারত এখন ৩৫ শতাংশ কম দামে রাশিয়ান ক্রুড কিনছে। যুদ্ধের এই সময়ে রাশিয়া চীনের কাছে ৩৪.৪৩ বিলিয়ন ডলার এবং ভারতের কাছে ৬.৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ এখন আটটি দেশ থেকে পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে। দেশগুলো হলো কুয়েত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভারত।
জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিপিসির একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এই কমিটি দেখভাল করছে, কিভাবে তেল ক্রয় করা যায়। তারা বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং সেই বিষয়টি আমাদের জানাবেন। তবে বৈঠক করা হলেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে কমিটি থেকে আমাদের এখনও কিছু জানায়নি।