রাশিয়া বৰ্তমান সময়ের সব থেকে আলোচিত নাম পুরো বিশ্বে। সম্প্রতি এই রাশিয়া ইউক্রেইন্ নিয়ে বিশেষ ব্যাপী একটি ভোটার আয়োজন করে আন্তর্জাতিক মহল। বিশেষ করে রাশিয়ান ফেডারেশনে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে যুক্ত করার বিষয়ে জাতিসংঘের নিন্দায় ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দেওয়ার পর বাংলাদেশ আর কোনো চাপের মুখে পড়বে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এই ভোটের প্রতীকী গুরুত্ব থাকলেও ব্যবহারিক গুরুত্ব নেই।
একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা ইস্যুতে বাংলাদেশ তার নীতি তুলে ধরতে পেরেছে বলেও মনে করেন তারা। কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি ভালো অবস্থান বলেও মনে করেন তারা।
বুধবার সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে রেকর্ড সংখ্যক ভোটে অনাস্থা প্রস্তাব অনুমোদন পায়। ১৪৩ টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে (ইউক্রেনের পক্ষে) এবং রাশিয়া এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে
ভারত ও চীনসহ ৩৫টি দেশ বিরত থাকে এবং চারটি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। আলবেনিয়ার দেওয়া এই প্রস্তাবের ভোট প্রক্রিয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকে। এটা বাংলাদেশের ইউটার্ন কিনা জানতে চাইলে সাবেক (অবসরপ্রাপ্ত) মেজর জেনারেল রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক বলেন, এটাকে ইউটার্ন বলা যাবে না। বাংলাদেশ এ বিষয়ে তাদের অবস্থান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান, সকল বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি, জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতি সকলকে মেনে চলতে হবে।বাংলাদেশও বিশ্বাস করে যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে যেকোনো দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা উচিত।
ফিলিস্তিনি ও ইউক্রেনের মতো অন্যান্য আরব ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একই ধরনের অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও বাংলাদেশ জোর দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধের চলমান সংকট নিয়ে বাংলাদেশ খুবই উদ্বিগ্ন, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা কোনো দেশের জন্যই ভালো নয় বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের সর্বোত্তম উপায়।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ইস্যুতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে এবং চারবারের মধ্যে দুইবার বিরত থেকেছে। ২ মার্চ বাংলাদেশ রাশিয়ার আক্রমণ বন্ধের প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সর্বশেষ যে প্রস্তাবে ভোট হয়েছিল, সাধারণ পরিষদের এই ভোটের কোনো প্রভাব নেই। প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে এবং এটি নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়নি এটি ভেটো দেওয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের এই ভোটের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডেকেছিলেন তারা চেয়েছিলেন এই নিন্দা প্রস্তাবটি সর্বোচ্চ ভোটে পাস হোক। এটি প্রতীকী ছিল তারা একটি রেকর্ড রাখতে চায় এবং বাংলাদেশ বিষয়টি মেধার ভিত্তিতে দেখেছে।
তার ভাষায়, “বাংলাদেশ প্রথমবার ভোটদান থেকে বিরত ছিল, কারণ তখন পুরো দায়ভার রাশিয়ার ওপর চাপানো হয়।” দ্বিতীয়টি ছিল মানবাধিকারের ইস্যু তারপর বাংলাদেশ এর পক্ষে ভোট দেয় তৃতীয়, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার প্রশ্নে ভোটদান থেকে বিরত থাকে এবং সর্বশেষ যেটি বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দিক থেকে দেখেছিল, তাই পক্ষে ভোট দেয় কিন্তু এটি অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ ভিন্ন অবস্থান নেবে না তা বলা যাবে না।
তার মতে, ‘এটা বোঝা যায় বাংলাদেশ কোনো অঞ্চলের কথা চিন্তা করে অবস্থান নিচ্ছে না’। আগে দেখা যেত ভারত যে অবস্থান নিয়েছিল বাংলাদেশও সেই অবস্থান নিয়েছিল কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে তা ছিল না ৮০ বা ৯০ দশকের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ এক নয় তা না হলে এত ভোটে বাংলাদেশ জিতত না। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল।
তারপরও রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো চাপ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না কোনো চাপ থাকবে। কারণ, রাশিয়াও জানে বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন ফোন-টোন দিয়ে ভোট দিয়েছে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু একই সঙ্গে কিরগিজস্তানে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাশিয়া বুঝতে পারে না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হকও মনে করেন, এই ভোট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতির কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ সাধারণ পরিষদের এই ভোট গুরুত্বপূর্ণ নয়, বাধ্যতামূলকও নয়।তিনি বলেছেন: “এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট রাশিয়ার বিপক্ষে।” কিন্তু রাশিয়া তাদের সাথে ব্যবসা করা বন্ধ করেনি যারা আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ রাশিয়ার আরও অনেক বিনিয়োগ ও ব্যবসা রয়েছে। তারা বুঝতে পারে।ফলে সম্পর্ক খারাপ হবে না। বাংলাদেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গেছে, এটা কি কারো সম্পর্কের ক্ষতি করে?
তিনি আরও বলেন, কূটনীতির দিক থেকে আমি বলব বাংলাদেশ একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ একদিকে বাংলাদেশ জাতীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বা অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশে প্রবেশ করলে আমরা কী বলব? কারণ, এই ভোটের প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো গুরুত্ব নেই, তাই বাংলাদেশের অবস্থান নিরাপদ বলা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, এ দিকে রাশিয়াকে নিয়ে এখনো বেশ চিন্তিত রয়েছে সারা বিশ্ব। রাশিয়া-ইউক্রেইন্ যুদ্দ এখনো থামছে না আর এটি সারা বিশ্বকে ফেলতে পারে বড় ধরনণের বিপদে। এর এই কারনে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রই চাচ্ছে এই যুদ্ধ বন্ধ হোক অন্তনিবিলম্বে।