গতকাল বুধবার অর্থাৎ ১২ অক্টোবর রাতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যকার সংঘাত নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এই ভোট প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনের অখন্ডতা রক্ষার দিকেই বেশি ভোট পড়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে অনেকটা প্রকাশ্যেই ইউক্রেনের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দিল। এ ভোট প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনে যে চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সাথে যুক্ত করার জন্য এ সংঘাত শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিল এবং সেটা সমগ্র বিশ্বকে জানান দিয়ে দিল।
প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৩টি ভোট পড়েছে। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ৫টি দেশ। এগুলো হলো রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, নিকারাগুয়া ও বেলারুশ। চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ ৩৫টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নিয়েই ‘অ্যাবস্টেইন ভোট’ দিয়েছে। এর আগ গত সোমবার প্রকাশ্যে ভোট হবে কিনা- এমন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল ভারত। আর বাংলাদেশ দিয়েছে ‘এবস্টাইন ভোট’। বেশিরভাগ দেশ প্রকাশ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় গতকাল ওই ভোট প্রকাশ্যেই হয়েছে। রাশিয়া গোপন ব্যালটে ভোট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
গতকাল রাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উথ্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা: জাতিসংঘ সনদ সমুন্নত রাখা’ শীর্ষক প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। আমরা তা করেছি, কারণ আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সমস্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির বিষয়ে জাতিসংঘের সনদের উদ্দেশ্য এবং নীতিগুলি ব্যতিক্রম ছাড়াই সকলকে মেনে চলতে হবে।
আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে যেকোনো দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা উচিত, বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এমনটাই বলেন। এই প্রেক্ষাপটে, আমরা বিশেষ করে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি এবং অন্যান্য আরব ভূমি দখলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনুরূপ ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছি।
সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউক্রেনের সং”ঘাত অব্যাহত থাকা এবং এর বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, যু”দ্ধ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরিতা কোনো জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। সংলাপ, আলোচনা এবং মধ্যস্থতা হল সংকট ও বিরোধ সমাধানের সর্বোত্তম উপায়।
বহুপাক্ষিকতায় দৃঢ় বিশ্বাসী হিসেবে আমরা জাতিসংঘ এবং এর মহাসচিবের কার্যালয়ের পাশে দাঁড়াবো এবং আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সমর্থন করব, বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত বলেন। আমরা জাতিসংঘ এবং এসজি অফিসকে সকল স্তরের জনগণের আস্থা ও আস্থা অর্জনের জন্য সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার এবং সকলের প্রত্যাশা পূরণের জন্য কাজ করার আহ্বান জানাই। বাংলাদেশ বিরোধের সকল পক্ষকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধের সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার জন্য এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে, এছাড়াও অবিলম্বে কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু করার জন্যও আহবান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, মানবজাতির কল্যাণে আমাদের যু”দ্ধের অবসান ও অ’স্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে কাজ করতে হবে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অবশ্যই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য একসাথে কাজ করে যেতে হবে।
তবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পক্ষে ও বিপক্ষে যে দেশগুলো ভোট দিয়েছে তার মধ্যে বেশিরভাগ ভোট পড়েছে রাশিয়ার বিপক্ষে। কারণ বিশ্ব শান্তি এবং বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা রক্ষার জন্য দেশগুলো এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রাশিয়ার পক্ষে যারা ভোট দিয়েছে তারা মূলত স্বার্থ রক্ষার জন্যই এমনটি করেছে, বলে জানিয়েছেন আন্তর্তিকজা পর্যায়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। সে দিক থেকে বাংলাদেশ কোনো ভুল করেনি বলেই মনে করা হচ্ছে।