বাংলাদেশের রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রভাব অনেকটা গুরুত্ব হিসেবে দেখা হয়, কারণ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচনে ভোট কারচুপিসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে। যার কারনে বাংলাদেশের নির্বাচন ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে মন্তব্য করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া আরো কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেছে। এবার রাশিয়ার মন্তব্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন সমালোচক পিনাকি ভট্টাচার্য। তার পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো।
রাশিয়া বলছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মাইন্যা নিবেনা। সাধারণভাবে কোন নির্দিষ্ট প্রেক্ষিত ছাড়া কথাটা শুনতে ভালোই লাগে! কিন্তু সাবেক কমিউনিস্টদের এই কথা কেন বলে? আসব সেকথায়!
তার আগে, হাসিনা সরকার কীভাবে ক্ষমতায় আসছে? ওয়ান ইলেভেন করেই তো আসছে। ইন্ডিয়া আমেরিকার যৌথ প্রযোজনায় আসছে তো। এখন আমেরিকা বুঝতেছে সে কতো বড় হাসিনা-দানবকে ক্ষমতায় বসাইছে। কাজেই এই দানবকে উপ/ ড়ে ফেলা বাংলাদেশের কাধ থিকা সরানোর দায়ও আমেরিকার। তবেই হবে হিসাব বরাবর! তাই না! আমেরিকা যে পাপ বা গুনা করেছে এর প্রায়শ্চিত্ত!
এর আগে কেউ যদি আলটপকা বলে “তৃতীয় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ খারাপ” তাই করা যাবে না বলে এনিয়ে বিবৃতি দেয় বা এমন বিবৃতি সমর্থন করে তাহলে বুঝতে হবে এ’হল হাসিনার দালাল বা ভাড়াটে ও আরেক সুবিধাভোগী অথবা খোদ “হাসিনা ফ্যাসিজমের” দোসর!
দেখেন বাংলাদেশে ইন্ডিয়ার সচিব সুজাতা সিং আইস্যা এরশাদকে যদি নির্বাচনে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়া বলে নির্বাচনে না গেলে জামায়াত ক্ষমতায় আসবে, আর তোমাকেই ভাড়াটে গৃহপালিত-সাজানো বিরোধী দল করা হবে – তাহলে এইটা আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। প্রনব মুখার্জি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের চাকরির নিশ্চয়তা দেয় এইটা আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। তখন এই রাশিয়া বা ভারত এরা কোথায় ছিল?
বাংলাদেশের জনগন ভোট দিতে পারেনা। তাদের নাগরিক অধিকার কাইড়্যা নেয়া হইছে। তার উপরে গুম খুনের একটা ফ্যাসিস্ট শাসন চাপায়ে দেয়া হইছে। এখন হিট/লার যদি আইস্যা মিত্র বাহিনীরে আইস্যা বলে আমি আমার দেশের নাগরিককে গ্যাস চে*ম্বারে মার/ছি এতে তোমার কী যায় আসে, আমার আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করো কেন তাইলেকী হবে? ইয়াহিয়া খান ইন্দিরা গান্ধীকে যাইয়া যদি বলে, আমি আমার দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতেছি তুমি কেন অস্ত্র আর ট্রেনিং দাও বাঙালিদের এইটা তো আমার আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, তাইলে হবে? আমরা মানবো? মায়ানমারের জেনারেলরা যদি বলে আমরা রোহিঙ্গা মাই/র্যা ছাফা কইর্যা দিবো তোমারা আমার আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করো কেন, তাইলে চলবে?
আজকাল বাজারে একটা কার্টুন দেখা যাচ্ছে এএফপি এর তরফে ছাড়া হয়েছে। ২০০৭ সালের আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বিউটিনিস-কে হাসিনা তীরের তুন বা আটি থেকে একটা করে তীর তুলে দিচ্ছে। আর রাষ্ট্রদুত সেই তীর মারছে বাংলাদেশের সংবিধানে। আর দূরে পাবলিক বলছে বাইরের হস্তক্ষেপ চলবে না। এই হল কার্টুনের কাহিনী! এটা আসলে হাসিনা সমর্থক কোন কমিউনিস্টের কার্টুন। তখন হাসিনা এভাবেই আমেরিকান হস্তক্ষেপের হাত ধরেই ক্ষমতায় এসেছিল। তখন রাশিয়া কোথায় ছিল আর সাথে এই হাসিনা সমর্থকেরা?
রাশিয়া বরং বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বক্তব্য দিয়ে কুটনৈতিক সীমা লংঘন করেছে। আর হাসিনাকে রক্ষার রাশিয়ার চেষ্টা আর এই ধৃষ্টতা বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণার সাথে মনে রাখবে।
রাশিয়া-হাসিনা কী করবে? তাদের মিলন বা সখ্যতা কি উতপাদন করবে? হাসিনা ফ্যাসিজমের চরম সীমা? একটা ম্যাসাকার, নির্বিচারে বিরোধীদের হত্যা? যেন বাংলাদেশের নাম হয় উত্তর কোরিয়া আর হাসিনার নাম হয় কিম-উল কিংবা কিম-জং উন হাসিনা?
রাশিয়া অথবা দুনিয়ার কমিউনিস্টদের মনে রাখা উচিত কমিউনিস্ট রাজনীতিতে “অধিকার” বলে কোন ধারণাই নাই। অথবা না “নাগরিক”, না “নাগরিক অধিকার” বলে কোন টার্ম আছে। এটাই কমিউনিস্টদের রাষ্ট্রবোধ!
আর এই অযোগ্যতা ঢাকার জন্যই পুতিন এসেছেন নিজ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের কথা বলে নিজেদের চিন্তা ও চর্চার অযোগ্যতা লুকানো!
এই প্রসঙ্গে প্রথম আলোর শিরোনাম “বাংলাদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই: রুশ দূতাবাস” এই শিরোনাম করাটা তাদের ভুল। প্রথম আলোর সম্পাদকদের জানা উচিত নাগরিক মৌলিক অধিকার ধারণাটা পুতিনের খামতি তারা ল্যাগিং। কাজেই রুশ রাষ্ট্রদুত খাস পুতিনের লোক হলে সে “অধিকার” শব্দটা ব্যবহারই করে নাই। প্রথম আলো অনুমান করে ভাবে বুঝে নিজে বসিয়ে দিয়েছে!
শেষ কথা হাসিনার জবরদস্তিতে ক্ষমতার যাবার স্বার্থে, তার এই লোভের পরিণতিতে আমরা বাংলাদেশকে রাশিয়া বা আমেরিকার পক্ষে নিজেরা ভাগ হয়ে যেতে দিতে পারি না।
প্রসংগত, বাংলাদেশের রাজনীতি এমন একটি রাজনীতি যেখানে রাজনৈতিক নেতারাই জানে না আমি ঠিক কী কারণে আমার দলকে ভালোবাসি। কারণ তিনি কিছু স্বার্থে রাজনীতি করে থাকেন। নিজেকে সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি হিসেবে জাহির করতে কিংবা সমান্য কোনো কিছু বিবেচনা করে। তবে দেশের কল্যানে রাজনীতির মানসিকতা খুব সামান্য সংখ্যক রাজনৈতিক নেতার মধ্যে রয়েছে। তাই দেশের মানুষের প্রতি নেতাদের ভালোবাসা খুবই বিরল।