সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে প্রেমিককে গাছের সঙ্গে বেঁধে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে গ*ণধর্ষণ করেছে স্থানীয় এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ও তার বন্ধুরা। শুক্রবার (৮ মার্চ) রাতে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে শনিবার (৯ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে দোয়ারাবাজার থানায় মামলা হয়।
ধ*র্ষিতা ও তার প্রেমিক বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।
ভিকটিমের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মেয়েটির বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুরে। কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুক্রবার তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে ছেলের বন্ধু আফাজ উদ্দিনের দোয়ারাবাজারের কামারগাঁওয়ের বাড়িতে চলে যায়। দোয়ারাবাজারের আজমপুর খেয়াঘাটে সন্ধ্যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আব্দুল করিম তাদের আফাজ উদ্দিনের বাড়িতে নিয়ে যান।
রাতে জালালপুর গ্রামের ভেতর গিয়ে আবদুল করিম অটোরিকশায় গ্যাস নেই জানিয়ে তাদের নামিয়ে দেয় এবং মান্নারগাঁও ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্পাদক আফছর উদ্দিনকে ডেকে আনে। এ সময় আফছর তাদের মারধর ও পুলিশে দেয়ার ভয়ভীতি দেখায়। ভয়ে ওই তরুণ বন্ধুর বাবা মিয়াজান আলিকে ফোন দেয়। মিয়াজান আলী ঘটনাস্থলে এলে তাকেও আফছর ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরে রাত ১টার দিকে দু’জনকে জালালপুরের ময়না মিয়ার ছেলে ফয়জুল বারীর একটি ঘরে নিয়ে আটকে রাখে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয় উভয়ের মোবাইল ফোন ও আট হাজার টাকা। এক পর্যায়ে ছেলেটিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে আফছর ও তার বন্ধু ফয়জুল বারি, কামারগাঁওয়ের আবদুল করিম ও জালালপুরের ছয়ফুল ইসলাম মিলে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে।
ঘটনার পর আফছার অসুস্থ মেয়ে ও তার প্রেমিককে আবার করিমের অটোরিকশায় তুলে সুনামগঞ্জে পাঠায়। ভোর সাড়ে চারটার দিকে করিম কাটাখালী বাজারের কাছে এসে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে নামতে বলে। ওই তরুণ ও কিশোরী নেমে পেছন দিকে ধাক্কা দেয়ার জন্য যেতেই করিম দ্রুত অটোরিকশা নিয়ে সটকে পড়ে। পরে সকাল পর্যন্ত স্থানীয় একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় ওই কিশোরী ও তার প্রেমিক। সকালে স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সিকান্দার আলির সহযোগিতা চায় তারা। সিকান্দার আলী শনিবার দুপুরে দু’জন ইউপি সদস্যকে বিষয়টি জানালে তারা পুলিশে খবর দেন। বিকেলে পুলিশ এসে নির্যাতিতা ও তার প্রেমিককে তাদের হেফাজতে নেয়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা আফছারসহ চার আসামির মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে, স্থানীয় গণমাধ্যম ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে নম্বরটি ব্লক করার আগে আফশার তাদের ফোন করে নিজেকে রক্ষা করার অনুরোধ করেছিলেন।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস জানান, খবর পেয়ে দোয়ারাবাজার থানার ওসি ও সহকারী পুলিশ সুপার (চাতক সার্কেল) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা ভিকটিম ও তার প্রেমিকের বক্তব্যও শুনছে। শনিবার রাতে ভুক্তভোগী ওই কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল খালেক বলেন, এ ধরনের জঘন্য ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।