বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখনো রয়েছে বেশ ধোয়াসা। বিশেষ করে রাতের বেলায় ব্যলট ভরার বিষয়টি নিয়ে এখন চলে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। আর এই আলোচনা সমালোচনাতেই এবার যেন ঘি ঢেকে দিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবল হক চুন্নু।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘তবে কাজ (ভোট) রাতে হয়। এর মানে কি, আমরা এটা করছি। আমি কি বলব, এটা হয়. এটা না, এটা না?
এ কারণে আগামী নির্বাচনে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, ‘এখন প্রতিটি এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। তাই, আপনি চাইলে সকালে (ভোট কেন্দ্রে) ব্যালটে যাওয়া সম্ভব।’
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি প্রতিনিধি দল। নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)সহ অন্যান্য কমিশনার ও ইসির সচিব উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে ইভিএম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোটের তীব্র বিরোধিতা করেন এই বিরোধী দল, সংসদ নেতা ড. ইভিএমের ওপর দেশের মানুষের আস্থা নেই উল্লেখ করে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। ইভিএমে ভোট হলে আসন্ন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেবেন না বলেও জানান তারা।
তবে ইভিএম নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সংলাপে ইভিএমের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘ইভিএমের ওপর আমাদের আস্থা নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তাকে বিশ্বাস করি না। মানুষ মনে করে ইভিএমে ভোট পরিবর্তন হলে কিছু করার নেই। কারণ ফলাফল আর পরীক্ষা করা যাবে না’
নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন: ‘আপনার ইভিএম বিশেষজ্ঞরা আমার মাথায়ও ঢুকেনি। জনগণের আস্থা ছাড়া ইভিএম ব্যবহার যৌক্তিক হবে না। ‘
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘ইভিএম খুবই কঠিন একটি ব্যবস্থা। অনেক দেশ ইভিএম বাতিল করেছে।’
প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু তার নির্বাচনে ইভিএমের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যেই ইভিএম মেশিন বিকল হয়ে যায়। কিন্তু যখন এটি সমাধান করা হয়, তখন আপনি এমন ব্যক্তিকে খুঁজে পাবেন না যিনি এটি ঠিক করবেন।’
নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করে সেন্টু বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ভোটের সময় ইভিএম নষ্ট হলে তা ঠিক করবেন? নির্বাচনের অন্যান্য দাপ্তরিক কার্যক্রম?
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান এক পর্যায়ে ইভিএমের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, তার আমলে ইভিএমে কোনো সমস্যা হয়নি।
এ সময় জাপা সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব খানকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ইভিএম খুবই স্পর্শকাতর। এটা নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নুও বলেন, ‘আপনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। রাজনৈতিক দলের সমর্থন না পেলে নির্বাচনে আপনি অরক্ষিত। সমস্যা হল আমাদের সিস্টেম। কোনো বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য না থাকলে যতই শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করা হোক না কেন, তা নিষ্ফল হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই চায় না নির্বাচন ভালোভাবে হোক।’
সহ-সভাপতি ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন ব্যালটে নেওয়ার দাবি জানিয়ে চুন্নু বলেন, আমরা চাই সেই নির্বাচন ব্যালটে হোক। ” নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক।
দলটির মহাসচিব আরও বলেন, ইভিএম করে এই নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
প্রসঙ্গত, মুজিবল হক চুন্নুর এই বক্তব্যে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে হচ্ছে নানা ধরনের সংবাদ। অনেকেই এ নিয়ে এবার শুরু করেছেন নানাবিধ আলোচনা সমালোচনা।