প্র্ত্যেক ধর্মের মানুষের নিজস্ব বা আলাদা কিছু নিয়ম বা ধর্মীয় বিধান রয়েছে যেগুলো ঐ সকল ধর্মাবলম্বীদের মেনে চলতে হয়। খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কম হলেও তারা তাদের ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলেন। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। এবার সেই নিয়ম মেনে একজন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে দিনের পরিবর্তে রাতে।
খ্রিস্টান ধর্মাবলস্বী “সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্ট” সম্প্রদায়ের শনিবার দিনের বেলা পড়াশোনা করার নিয়ম নেই। তাই চলমান এসএসসি পরীক্ষায় শনিবার রাতে পরীক্ষা দিচ্ছেন কুষ্টিয়ার আলবার্ট স্মিথ বালা নামের এক পরীক্ষার্থী যিনি এই সম্প্রদায়ের। তবে অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের মতো তিনিও সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে সুপারের কক্ষে অপেক্ষা করতে থাকেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পরীক্ষা দেয় সে।
আলবার্ট কুষ্টিয়া শহরের সানআপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ইংরেজি ভার্সনের ছাত্র। কুষ্টিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।
আলবার্ট শনিবার ব্যতীত অন্যান্য দিনে দিনে পরীক্ষায় অংশ নেন। শনিবার রাতে কুষ্টিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আলবার্টের পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে একজন শিক্ষক ছাড়াও একজন কেন্দ্র সচিবসহ সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী অ্যালবার্ট স্মিথ বালা বলেন, “আমাদের ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী আমরা শনিবার সূর্যালোক থাকা পর্যন্ত লেখাপড়া করা হয় না। সেজন্য সকালে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রে ঢুকে আলাদা রুমে বসে থাকি। দুপুরে খাবার আনা হয় বাসা থেকে। আর বিশ্রামের জন্য তোষক-বালিশ আছে। সারাদিন সারাদিন কেন্দ্রের রুমে বসে সন্ধ্যায় পরীক্ষা দেই।”
চলমান এসএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ভৌত বিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত পরীক্ষা শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বাংলা দ্বিতীয় পত্র, পদার্থবিদ্যা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ১ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় উচ্চতর গণিত এই নিয়ম অনুযায়ী দিতে হবে।
কুষ্টিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব খলিলুর রহমান জানান, বোর্ডের নিয়মানুযায়ী শনিবার সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ‘সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্ট’ সম্প্রদায়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী আলবার্ট স্মিথের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। শনিবার ছাড়া অন্য দিনে পরীক্ষাযগুলোতে সে অন্য ছাত্রদের সঙ্গে বসে।
এর আগে, ২০১৯ সালের এসএসসি যশোর বোর্ডের ইতিহাস পরীক্ষা রিকি হালদার নামে এক ছাত্র দিনের পরিবর্তে রাতে দিয়েছিল। তিনিও একই ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত। কুষ্টিয়ার কুমারখালী এমএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
অ্যালবার্ট স্মিথ বালার বাবা সুকলাল বালা বলেন, “আমাদের ধর্মে শনিবারে গির্জার অনুষ্ঠান হয়। শনিবার পরীক্ষা হলে রাতেই দিতাম আমরাও। বোর্ডে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। সকালে সেখানে গিয়ে রাতে পরীক্ষা দিতে হতো। কিন্তু এখন সরকার প্রতিটি জেলায় এই ব্যবস্থা করেছে।”
তিনি আরো যোগ করে বলেন সরকার এখন থানা পর্যায়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ার সুবিধা প্রদান করেছে। যার কারণে শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। এদিক থেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে রাতে পরীক্ষা দিতে কোন ভোগান্তিতে পড়তে হয় কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এতে কোন ভাবেই সমস্যা হয়না, কারণ সূর্য ডোবার পরে পরীক্ষা দিতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা।