Monday , December 23 2024
Breaking News
Home / National / রাতারাতি ব্যক্তিমালিকানায় ৪শ কোটির সরকারি বাড়ি

রাতারাতি ব্যক্তিমালিকানায় ৪শ কোটির সরকারি বাড়ি

৪৭ বছর বয়সী একটি জটিলতা মাত্র পাঁচ মাসে সমাধান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নথিও গায়েব হয়ে গেছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তার ন্যায্য অংশ ছেড়ে দিয়ে ১ বিঘা ৫ কাঠা ১০ ছাতক এলাকার একটি দ্বিতল ভবনসহ একটি বাড়ি ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করেছে। বাড়ি নং ৬, রোড নং ৯৮, সিইএন (সি) ব্লক, গুলশান-২, ঢাকা, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি আমলে না নিয়ে খোদ মন্ত্রণালয়ের এমন ‘উদারতা’ নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তোলপাড় চলছে বলে জানা গেছে।

নথিপত্র অনুযায়ী, দেশের অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশানের আসল নাম ছিল ভোলা গ্রাম। ওই এলাকার পুরনো জমির কাগজপত্রে এখনও ভোলা সামির মৌজার উল্লেখ রয়েছে। যাইহোক, ১৯৬১ সালের দিকে, গ্রামটি ডিআইটি (ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট) এর প্রথম চেয়ারম্যান, একজন পাকিস্তানি কর্মকর্তা জি এ মাদানি অধিগ্রহণ করেছিলেন, যিনি সেখানে একটি পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা তৈরি করেছিলেন। ঢাকার কাছের এই আবাসন প্রকল্পের নামকরণ করা হয় তৎকালীন করাচির অভিজাত এলাকার নামানুসারে গুলশান। সে সময় জিএ মাদানী পূর্ব বাংলায় বসবাসরত পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জমি বরাদ্দ দেন। ঢাকার পাশে ছায়াময় পরিবেশে থাকার জন্য তারাও বেছে নেয় গুলশানকে।

গুলশান এলাকার জমিজমার পুরোনো কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ৯৮নং সড়কের ৬ নম্বর বাড়ির পুরোনো মালিকের নাম নবাব ওয়াজি উল্লাহ। স্বাধীনতার আগে এখানে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী সময়েও এর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তানে পাড়ি জমান ওয়াজি উল্লাহ। স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশবলে (পিও-১৬/৭২) বাড়িটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ’৭৩ সালে বাড়িটি গণপূর্তের গেজেটভুক্ত হয়। এরপর ওই বাড়ির এক সময়ের কেয়ারটেকার কেপি আজগার আলী এর মালিকানা দাবি করে হাইকোর্টে রিট (নম্বর ২৫১/১৯৭৩) করেন। ১৯৭৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত নয় মর্মে ঘোষণা করা হয়।

সাধারণত পূর্ত মন্ত্রণালয় এ ধরনের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা করা হয়নি এই রিটের মামলায়। বরং ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের গেজেটে পরিত্যক্ত তালিকায় এই বাড়ির নাম ছিল না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, পরিত্যক্ত তালিকা থেকে কোনো সম্পত্তি বাদ দেওয়ার নজির এদেশে নেই। শুধুমাত্র একটি মামলার রায়।

অন্যদিকে রিটে জয়ী হলেও কেপি আজগর আলীকে বাড়ির দখল পেতে আদালতে আরেকটি আবেদন করতে হয়েছে। কিন্তু তিনিও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেননি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দখল পেতে আদালতে গেলে বাড়িটি রাজউকের হাতছাড়া হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি বুঝতে পেরে আবেদনকারী কেপি আজগর আলী আদালতের দ্বারস্থ হননি। ফলে হাইকোর্টের রায় থাকা সত্ত্বেও ওই সময় বাড়িটির দখল অপূর্ণ থেকে যায়।

জানা যায়, আইনি পথে না হেঁটে শুরু থেকেই মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালীদের সন্তুষ্ট করে বাড়িটি দখলে নিতে চেয়েছিলেন আজগর আলী। তিনি 47 বছর পর এই প্রক্রিয়ায় সফল হন। সম্প্রতি হঠাৎ করে কেপি আজগর আলীকে বাড়ির দখল দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মাত্র চার মাসের প্রক্রিয়ায় বাড়িটি তার নামে রেজিস্ট্রি করা হয়।

রাজউক রাজ্য শাখা সূত্রে জানা গেছে, রাজউকে 2 আগস্ট, 2023 তারিখে জমি বন্টন দলিল রেকর্ড করা হয়েছে—ক্রমিক নম্বর 29 সহ। বন্টন তালিকার ভিত্তিতে একই বছরের 17 অক্টোবর মনোনয়নের চূড়ান্ত চিঠি জারি করা হয়েছিল। প্রথম হাজিরার চিঠি দেওয়া হয় ৫ নভেম্বর। আর ২৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয় হাজিরার চিঠি দেওয়া হয়।

রাজউকের একজন সহকারী পরিচালক বলেন, রাজউকের কমবেশি অনেকেই জানেন উচ্চবিত্তের তদবিরের কারণে মাত্র দুই মাসের মধ্যে বাড়িটি ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই বাড়ি নিয়ে পূর্ত মন্ত্রণালয় যেভাবে আমাদের চিঠি দিয়েছে, অতীতে মন্ত্রণালয় থেকে এমন চিঠি দেওয়ার নজির নেই। রাজউকের তালিকায় নাম না থাকা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটি 1973 সালে গেজেটেড হয়েছিল কি না – এটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। পূর্ত মন্ত্রণালয় কেন রাজুর কাছে কাগজপত্র হাতে নিয়ে এ বাড়ি সম্পর্কে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায় তা বোধগম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, আসলে ঊর্ধ্বতন মহলের নীতিগত সিদ্ধান্তে বাড়িটি রাজউক থেকে ইতিমধ্যেই ডিলিস্ট করা হয়েছে। এখানে রাজউকের কিছু করার ছিল না। আমরা শুধু আদেশ পালন করেছি।’

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০১০ সালে রাজউকের সচিব এ বাড়ি নিয়ে পূর্ত সচিবকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে ১৯৭৩ সালে পরিত্যক্ত সম্পত্তির গেজেটিং সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এবার সেই তথ্য উল্লেখ না করেই এই সম্পত্তি বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পূর্ত মন্ত্রণালয়।

এ সংক্রান্ত চিঠি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অভিজিৎ রায় জারি করেছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি একজন জুনিয়র কর্মচারী। এখানে যা কিছু ঘটেছে সবই

ভোটের মধ্যে ১০ থেকে ২ তারিখের ১০ তারিখের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরেজমিন গিয়েও বৈঠকের পরীক্ষা মেলে। এমনকি অনুমতি মেলেনি বাড়িতে খুঁজেও। বাড়ির প্রধানফটকে কলিংবেল চাপলে নুরন্নবীক এক নিরাপত্তা প্রহরী ফোটক সক্রিয় জানতে চান এ প্রতিবেদকের। এ সময় মালিক কেপি আজগর আলী দেখেছেন—জানতে তিনি আমাকে বলেছেন বলেই জানাচ্ছেন প্রহরী। তার সঙ্গে কথা বলতে নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, ‘স্যার নিরাপত্তা সঙ্গে কথা বলেন না।’

পরে তিনি প্রধানফটক বন্ধ করে ইন্টারনেটের উপর যান। এর পরও কয়েকবার কেপি আজগর আলীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গত কয়েকদিন ধরে রাজউকের গুরুত্বপূর্ণ মো. আনিছুর রহমান মিঞার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। অনেকবার ফোন পাসও তিনি ধরেন। পরে রাজউকের চাষাবাদ, ‘স্যার ব্যস্ত আছেন’। কথা বলা যাবে না।

গৃহায়ন ও পূর্ত তারিখের কাজী গণের সাথে যোগাযোগের তথ্য জানাতে হলে, তার কাছে কোনো কিছু নেই।

About Zahid Hasan

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *