বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক রাজ্জাক। নব্বইয়ের দশকের এই নায়ক এমনভাবেই মানুষের হৃদয়ে তার নাম লিখেছেন যে আজও চিত্রজগত কে স্মরণ করলেই প্রতিটা দর্শকের হৃদয়ে তার নাম ভেসে ওঠে। কথিত তারকাদের বেড়ে ওঠার পেছনে থাকে নানান ধরনের গল্প। তেমনি তার ব্যতিক্রম নয় রাজ্জাক। অভিনয় খুব ছোটবেলা থেকে শুরু করলেও তার জন্য রাজি হতে হয়েছিল শর্তে। বিয়ে করতে হয়েছিল মাত্র ১৯ বছর বয়সে।
আবদুর রাজ্জাক ( Actor Abdur Rajjak ) ছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন নায়করাজ উপাধি। শিরোনাম কী, শুধু অভিনয়ের জন্য বাঙালির হৃদয়ে এখনো দাগ লেগে আছে।
তবে ছোটবেলায় পরিবার রাজ্জাককে এই পারফরম্যান্সের অনুমতি দেওয়ার শর্ত দেয়। শর্ত হল বিয়ে। আর সে কারণেই মাত্র ১৯ বছর বয়সে খাইরুন্নেসা লক্ষ্মীকে বিয়ে করেন অভিনেতা।
রাজ্জাক ২০১৫ সালের একটি সাক্ষাৎকারে এই গল্পটি বলেছিলেন। তিনি বলেন, “খুব কম বয়সে বিয়ে করেছি। কারণ, আমরা যে পাড়ায় থাকি, সেখানে অনেক গার্লফ্রেন্ড আছে। প্লাস নাটকের সূত্র ধরে আরও মেয়ের সঙ্গে কথা বলা শুরু করতে পরিবার ভয় পেয়ে গেল, কোনো দুর্ঘটনা ঘটুক! একদিন বাসায় ফিরে দেখি মিটিং। কি মিটিং? ‘তুমি নাটক করতে পারবে না।’ আমি নাটক ছাড়ব না। সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘নাটক করলে বিয়ে করতে হবে।’ এই বয়সে বিয়ে করব না। বললেন, ‘সমস্যা নেই।’ বিয়ে করলে নাটক করতে পারব? ‘হ্যাঁ।’ ঠিক আছে, বিয়ে কর। তারপরও নাটক ছাড়ব না। এক বছরের মধ্যে বিয়ে করলাম। তখন আমার বয়স ১৯। বোঝাপড়া খুব ভাল ছিল। আমি তাকে বললাম, সে জানে। আমার পাড়া থেকে বেশি দূরে নয়, ওদের বাড়ি থেকে তিন মাইল দূরে। যখন তার বিয়ে হয়নি, সেও আমার নাটক দেখেছে। তার সঙ্গে একটাই কথা ছিল- নাটক আমার প্রথম প্রেম। কিন্তু তারপর আপন। সারাজীবন ধরে রেখেছেন। চলচ্চিত্রে আসার পরও। ”
রাজ্জাক ১৯৪২ সালের এই দিনে (২৩ জানুয়ারি) পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। এভাবে বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স ৬৯ পেরিয়ে যেতেন। তিনি তার নিজের শহর কলকাতায় ৭ম শ্রেণীতে পড়ার সময় মঞ্চ নাটকে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন এবং ১৯৮৬ সালে ‘১৩ ফেকু ওস্তাগর লেন’ চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। এর পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা।
কথাগুলো রাজ্জাকের নিজের মুখেরই। জীবন টাকে খুব ছোটবেলা থেকে উপভোগ করতে যেয়েই হয়তো এই শর্তের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে। তবে যত বাধাই আসুক নিজেকে যেভাবে তিনি দর্শকদের মাঝে চলচ্চিত্র জগতে উপস্থাপন করেছেন তাতে তার নাম হয়ত চলচ্চিত্র জগতে সারা জীবন লেখা থাকবে স্বর্নাক্ষরে।