‘আমি ঘরে ভাত খাচ্ছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনে বাড়ির বাইরে রাস্তায় বের হয়ে দেখি আমার ভাইয়ের হাত কেটে ফেলেছে, পা কেটে ফেলেছে, পেটে কুপিয়ে নাড়িভুড়ি বের করে ফেলে রেখে চলে গেছে।’ কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেনের হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তার ভাই বিএম ফরহাদ রেজা।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে যশোরের অভয়নগরের সরদারপাড়ায় যুবলীগ নেতা মুর্দা হোসেনকে তার বাড়ি থেকে ১৫০ গজ দূরে সড়কে নির্মমভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। মুরাদ হোসেন ওই এলাকার সাহাবুল ইসলামের ছেলে। তিনি নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
নিহতের ভাই বিএম ফরহাদ হোসেন জানান, আমার ভাই রবিন অধিকারী বেচার সাথে হেঁটে যেতেন। তাছাড়া যুবলীগের পদ নিয়ে এলাকার কয়েকজন সন্ত্রাসীর সঙ্গে তার বিরোধ ছিল। আমার ভাই নওয়াপাড়া বন্দরের একটি ঘাটের সরদার। এর আগেও তিনি দুবার হামলার শিকার হয়েছেন। কয়েকদিন আগে এলাকার কয়েকজন সন্ত্রাসী তাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। দীর্ঘদিন ধরে ভাইয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করে অবশেষে গতকাল রাত ১০টার দিকে মুরাদ বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় আমার ভাইকে রাস্তায় একা পেয়ে এলাকার কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিহতের বাড়িতে গিয়ে নিহত যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেনের বড় বোন লিলিমা বেগমকে উঠানে বসে চিৎকার করতে দেখা যায়। পাশে বসে কাঁদছিলেন নিহতের বাবা বৃদ্ধ সাহাবুল ইসলাম। মুরাদ হোসেনের তিন মাস বয়সী শিশুটি দাদার কোলে বসে মায়ের কান্নাকাটি মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রটিও মায়ের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নিহতের বড় বোন লিলিমা বেগম বলেন, আমার ভাই মারা যাওয়ার আগে অ্যাম্বুলেন্সে সবার নাম বলেছিল। কারা তাকে হত্যা করেছে তা সবই বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে চৌদ্দ জন আমার ভাইকে হত্যা করেছে। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।
তিনি জানান, আহত অবস্থায় মুর্দাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে খুলনায় নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের বাবা সাহাবুল ইসলান বলেন, রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে আজ আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই এলাকার কেউ আমার ছেলের কাছে বিপদে আসেনি এবং ফিরে আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলের খুনিদের বিচার চাই।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিকুল ইসলাম জানান, লাশ এখন পর্যন্ত খুলনায় রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ আসবে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ বা মামলা করা হয়নি। আমাদের তদন্ত চলছে।