সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী হিসেবে রওশন এরশাদ বেশ কয়েক বছর ধরে রাজনীতিতে বেশ প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। ছয়বারের সংসদ সদস্য ড. তিনি দুই মেয়াদে সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এখন শেষ হয়ে যাওয়ায় সরকার ও দলের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে জাপার ‘সমঝোতা’ নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনা হচ্ছে। টানা ৩২ বছর পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন মেলেটি। ফলে তিনি সংসদ থেকে ছিটকে পড়েছেন। অন্যদিকে, দেবর জিএম কাদের সংসদে নিজের আসনে বসতে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জাপা চেয়ারম্যানকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন। সরকারের আনুকূল্য পেয়ে দলে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন বলে আশা করছেন রওশন এরশাদ ও তার ঘনিষ্ঠ নেতারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বরং নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছেন।
অন্যদিকে, রোববার (২৮ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর দুই দিন আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চান্নুকে ‘বাধা’ করে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। প্রশ্ন উঠেছে সংবিধান অনুযায়ী তার সেই এখতিয়ার আছে কি না। আর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বেগম রওশন এরশাদের জাপা প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদ থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোববার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় দলের ক্ষুব্ধ ও বঞ্চিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের স্ত্রী। তার ঘোষণার আলোচনায় জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করে গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়।
এদিকে রওশন এরশাদের সিদ্ধান্তকে আমলে নিচ্ছে না জিএম ক্যাডাররা। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘উনি (রওশন এরশাদ) বাদ পড়েছেন, আমরা তা বিবেচনায় নিচ্ছি না। সংবিধানের বাইরে যে কোনো মানুষ মনের মাধুরী দিয়ে কিছু বলতে পারেন। তাদের সিদ্ধান্তে আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করা রওশদ এরশাদ ১৯৪১ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি ‘বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থা’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ‘সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রওশনের নেতৃত্বে জাপার অংশগ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়। সরকারের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতাও ছিল তার। এবারেও তেমন গুরুত্ব পাবেন এমন আশায় ছিলেন রওশনপন্থীরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তিনিই প্রথম স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া হয়নি। জাপার চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে দায়ী করে রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বারবার চেষ্টাতেও প্রধানমন্ত্রীর যখন সাক্ষাৎ পাচ্ছিলেন না রওশন এরশাদ তখনই আলোচনা শুরু হয় তার গুরুত্ব ও দলে ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি। শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎ পেলেও কোনো কাজে আসেনি। যদিও রওশন এরশাদ নির্বাচনী মাঠ থেকে ছিটকে যাবেন এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি।
রওশন এরশাদ ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছয়বারের সংসদ সদস্য। এর মধ্যে ২০০৮ সালে তিনি ভোটে হেরে যাওয়ার পর উপনির্বাচনে এরশাদের ছেড়ে দেওয়া রংপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন। জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদ আমৃত্যু এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে সাদ এরশাদ সংসদ সদস্য হন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে শুধু রওশন নন, রওশনের ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ এবং তার ঘনিষ্ঠদেরও অনেকেই মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি সাদ যে আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন সেখানে এবার চাচা জিএম কাদের প্রার্থী হয়েছিলেন এবং বিজয়ীও হয়েছেন।
এরশাদের মৃত্যুর পর রওশন এরশাদের বিপদ বেড়ে যায়। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যু জাপানে সংঘাত বাড়িয়ে দেয়। এক অংশের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের, অন্য অংশের নেতৃত্বে ছিলেন রওশন এরশাদ। দীর্ঘদিন ধরে জাপানে দুটি প্রবণতা ছিল। রওশন এরশাদ নির্বাচনে না আসায় জিএম কাদের এককভাবে জাপাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে রওশন এরশাদ ও তার ঘনিষ্ঠজনরা পুরোপুরি কোণঠাসা।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে গত সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকে মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের পর রওশনপন্থী বলে পরিচিত সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ৬৭১ নেতাকর্মী