রহিমা বেগম এবং তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের টক্ অব দ্য টাউনে পরিনিত হয়েছে। ২৯ দিন ধরে আত্মগোপনে থাকা মা রহিমা বেগম এর জন্য কেঁদে কেঁদে সারা দেশের মানুষের কাছে তার মাকে ফিরে পাবার আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। তবে সময়ের সাথে সাথে খুলনার দৌলতপুরের ‘নিখোঁজ’ নারী রহিমা বেগমের অপহরণ নাটকের অজানা সব তথ্য বেরিয়ে আসছে।
ময়মনসিংহের লা’শ’ উদ্ধার থেকে শুরু করে ফরিদপুরে আত্মগোপন পর্যন্ত সব খবর জানতেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও পরিবারের সদস্যরা। ‘জমি বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপনে গিয়েছিলেন রহিমা বেগম’- এমন অভিযোগ রহিমার অপহরণ মামলায় গ্রেফতার ৫ জনের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিপক্ষকে আড়াল থেকে ফাঁসানোর ব্যবস্থা করলেন তিনি! উদ্ধারের ১৫ ঘণ্টা পর রহিমা বেগম দাবি করেন, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তার বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এদিকে মেয়ে আদুরির জামিনে রহিমা বেগমকে জামিনে মুক্তি দেন আদালত। রোববার সন্ধ্যায় খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আহমেদ ২২ ধারায় রহিমার জবানবন্দি নেন। পরে আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে জামিন দেওয়া হয়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। রহিমা ও তার মেয়ের বক্তব্যে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে।
খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানান, শনিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় খুলনা থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রহিমা বেগম যে বাড়িতে ৭ দিন লুকিয়ে ছিলেন সেখান থেকে তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে। তারা হলেন- বাড়ির মালিক কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী হীরা বেগম (৫০), ছেলে আলামিন বিশ্বাস (২৫) ও ছোট ভাই আবুল কালামের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৪৫)। তারা এখন খুলনা পিবিআই হেফাজতে রয়েছে। কুদ্দুস মোল্লা বর্তমানে বোয়ালমারী উপজেলা ডোবরা জনতা জুট মিলের কর্মচারী।
বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার ভাই জয়নাল জানান, আমার মামা কুদ্দুস সোনালী জুট মিলে চাকরির সুবাদে খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকায় নিখোঁজ রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। খুলনা শহরের মিরেরডাঙ্গা এলাকায়। ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানের স্ট্যাটাস থেকে বিষয়টি জানতে পারি। তারপর সেই ছবি রহিমা বেগমকে দেখান এবং জিজ্ঞেস করুন এটা আপনার ছবি কিনা; এ সময় রহিমা বেগম হতবাক হয়ে বলেন, মনে হচ্ছে আমার ছবি। রহিমা বেগমের ছেলে তার মেয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেওয়া দুটি মোবাইল নম্বরে (০১৭৭১১০০২০২, ০১৫৫৮৩৪৯৯০৫) যোগাযোগ করে। সাদি ওরফে মিরাজের স্ত্রী কল রিসিভ করেন। আমি রহিমা বেগমের কথা তাদের জানালে তারা ওই নম্বরে আবার ফোন করতে নিষেধ করেন। এরপর থেকে আমার সন্দেহ হলে রহিমা বেগমকে না জানিয়ে শনিবার বিকেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেনকে বিষয়টি জানাই। তিনি খুলনার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে নিখোঁজ নারী রহিমা বেগম বলে নিশ্চিত করেন।
বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম আমার পরিচিত। রহিমা বেগমকে না বলে আমরা কাউন্সিলর সাইফুলকে সবকিছু জানালে তারা খুব দ্রুত রহিমা বেগমকে নিয়ে যাবে। কাউন্সিলর রহিমা বেগম যাতে পালিয়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে বলেন। পরে শনিবার রাতে খুলনা ও বোয়ালমারী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রহিমা বেগমকে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এদিকে খবর চাওর হয়েছিল মরিয়মের মার নিখোঁজের পেছনে হাত ছিল মরিয়মের নিজেরও।আর এই কারনে তাকেও এখন রাখা হয়েছে নজরদারিতে। বিশেষ করে শুরু থেকেই পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল তাদের এই বিষয়টি নিয়ে। কারন তাদের দেয়া বক্তব্য পুলিশের কাছে লাগেনি খুব বেশি সঙ্গিন। আর শেষ পর্যন্ত প্রকাশ পেল সত্যটি।