সম্প্রতি রহিমা বেগম নামে এক নারী নিখোঁজ হওয়ায় আলোচনা সৃষ্টি হয়। মা রহিমা বেগমের সন্ধানে সংবাদ সম্মেলন করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মেয়ে মরিয়ম মান্নান। পরে তার সন্ধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত শুরু করে এর এক পর্যায় রহিম বেগমকে ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্ধারের পর বেরিয়ে আসতে থাকে ভিন্ন এক তথ্য। যদিও রহিমা বেগম দাবি করে তাকে অপহরন করা হয়েছিল কিন্তু তার নিখোঁজ হওয়ার পিছনে পরিবারের সদস্যের হাত আছে বলে দাবি করা হয়।
২৯ দিন পর উদ্ধার হওয়া রহিমা বেগম তার দুই মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও আদুরী আক্তারকে নিয়ে খুলনা ত্যাগ করেন। রোববার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার ভাটারায় মরিয়ম মান্নানের বাসায় পৌঁছান তারা। মরিয়ম জানান, গতকাল তিনি মায়ের সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, খুলনা মায়ের জন্য নিরাপদ না হওয়ায় তাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছি। এখানে তার চিকিৎসা হবে। মা কোনো ভুল করলে তা সংশোধন করা হবে। এদিকে, রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। অপহরণের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া অপহরণের নাটক সাজানোর জন্য মরিয়ম মান্নানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবিতে আজ খুলনা প্রেসক্লাবে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। অপরদিকে মরিয়ম মান্নানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও মিডিয়ার সামনে তার নানান অঙ্গভঙ্গি নকল করে ভিডিও প্রচার ও কটূক্তি করা হচ্ছে।
খুলনা সরকারি এমএম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী মোহনা মুক্তা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “এর আগে রহিমা বেগম প্রতিবেশী এক পরিবারকে ফাঁসানোর জন্য ধ/র্ষণের চেষ্টার মিথ্যা মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করেছিলেন। এবার তাই রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে নাটক বলে ধরে নিয়েছিল সবাই।’ ফেসবুকে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানের আপত্তিকর বেশকিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। এসব নিয়ে একই নেতিবাচক স্ট্যাটাস দিয়েছেন আরও অনেকে। তবে পুলিশ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার পর মরিয়ম মান্নান তার মাকে ফিরে পেতে নানা ধরনের আবেগময় স্ট্যাটাস ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে সোচ্চার ছিলেন। আত্মগোপনের ঘটনা অপহরণ দাবি করার কারণে এখন মরিয়ম মান্নানকে রোষানলে পড়তে হয়েছে।
জানা যায়, ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার মহেশ্বরপাশায় বাড়ির দ্বিতীয় তলার পানি আনতে গিয়ে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ ও র্যাব ছয়জনকে আটক করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রহিমা বেগমের প্রতিবেশী কুয়েতের সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া, মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল, হেলাল শরীফ ও একই এলাকার রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বিল্লাল হাওলাদার। শনিবার রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুরে খুলনার রহিমা বেগমের বাড়ির এক সময়ের ভাড়াটিয়া আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওই বাড়িতেই ছিলেন।তবে উদ্ধারের পর রহিমা দাবি করেন, ৪/৫ জন দুর্বৃত্ত মুখে কাপড় বেঁধে তাকে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞাতস্থানে ছেড়ে দেয়। পরে তিনি গোপালগঞ্জ মুকছেদপুর হয়ে পূর্ব পরিচিত ভাড়াটিয়া আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে যান। কাছে কোনো মোবাইল নম্বর না থাকায় কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি সাজানো বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় যাদের আটক করা হয়েছে তারা দোষী নয় তাদের মু্ক্তির দাবি জানায় তারা।