পবিত্র মাহে রমজানের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। রমজানকে ঘিরে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে চায় বিএনপি। একতরফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী নেতাকর্মীদের যথাযথ সম্মান দেবে বিএনপি। রমজানে মুক্তিপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হবে। ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে এই ইফতার অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দেবে দলটি।
সোমবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা। জনস্বার্থে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার কথা জানিয়েছেন তারা। তবে কী কর্মসূচি নেওয়া হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এ বছর রমজানে এতিম, আলেম, কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের সম্মানে কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন করবে বিএনপি। এছাড়া সারাদেশের সকল সাংগঠনিক জেলা ও ইউনিটে ইফতার মাহফিল আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হবে। সহযোগী সংগঠনগুলোও কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতারের আয়োজন করবে।
দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২৮ জুলাই থেকে সারা দেশে ২৭ হাজার ৫২৬ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। যার মধ্যে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ডের পর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মহাসচিবসহ দুই স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও সারা দেশের ২৫ হাজার ৫৪৪ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিনের পর থেকে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত বিএনপি হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করছে। তবে এর মধ্যে অধিকাংশ নেতাকর্মীই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কারাগারে এখন ১৫ কেন্দ্রীয় নেতাসহ দেড় হাজারের মতো নেতাকর্মী আছেন।
সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সাড়ে তিন মাস পর এতে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সভায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের আত্মত্যাগের জন্য ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রশংসা করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, সদ্য মুক্তি পাওয়া বিএনপির মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যকে বৈঠকে যোগ দিতে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। আমাদের অনেক নেতাকর্মী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন, আরও অনেক নেতাকর্মী মুক্তি পাবে। আমরা দেখব কি করা যায়।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে নেতারা বলেন, কারাগারে থাকা অধিকাংশ নেতাকর্মী পদবিহীন। নেতাদের উপলব্ধি, মাঠে নেতাকর্মীদের পরিকল্পিত গ্রেপ্তার। তাদের যদি সম্মান দেওয়া হয় তাহলে দল উপকৃত হবে। নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হবে। স্থায়ী কমিটির সব নেতা মত দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয়, কারামুক্ত নেতাকর্মীদের নিয়ে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে ১০টি ইফতার পার্টি হবে। সেখানে সিনিয়র নেতারা অংশ নেবেন। এছাড়াও বৈঠকে গ্রেফতার নেতাদের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্ব পেয়ে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নেতাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, তাদেরকে চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ জানানো হবে।
ভারপ্রাপ্ত নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি ও ধন্যবাদ জানিয়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হবে বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে।
বেশ কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। বাস্তবতা হলো গ্রেফতারকৃত প্রায় সকল নেতাকর্মীই মাঠে সক্রিয় ছিলেন। তবে তাদের বেশির ভাগই তৃণমূল নেতাকর্মী, যাদের কোনো পদ-পদবি নেই। ভবিষ্যতে পদমর্যাদার ভিত্তিতে তাদের সম্মানের পাশাপাশি মূল্যায়ন করা উচিত। এতে করে নেতাকর্মীরা রাজপথে কর্মসূচি সফল করতে আরও উৎসাহ পাবে।
এরই মধ্যে অন্তত ১৬ জন কেন্দ্রীয় নেতা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শহিদ উদ্দিন চৌধুরী ও শেখ রবিউল আলম। রাবি, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নাসহ অনেক নেতাকর্মী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
কারাগারে থাকা সিনিয়র নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সম্পাদক শরিফুল আলম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরুদ্দিন স্বপনসহ প্রমুখ অন্তত ১৫ কেন্দ্রীয় নেতা। এদের মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ইতিমধ্যে সবকটি মামলায় জামিন পেয়েছেন। আরও কয়েকজন এ মাসের মধ্যেই মুক্তি পাবেন বলে আশা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।