যৌতুককে বলা হয়ে থাকে সামাজিক ব্যাধি। আর এই ব্যাধি একটা সময়ে ছিল সমাজের স্তরে স্তরে। যৌতুকের কারনে নষ্ট হতো অনেক সংসার। ঝড়ে যেত অনেক প্রাণ। তবে সময়ের সাথে সাথে এই যৌতুক প্রথা মিলিয়ে যায়। কিন্তু তার পরেও বাংলাদেশে অনেক সময় শোনা যায় এই যৌতুক নিয়ে নানা ধরনের সব ঘটনা। যার নতুন আরো একটি প্রমাণ মিললো দেশে। কুমিল্লায় যৌতুকের টাকা দিতে দেরি হওয়ায় এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে বেদম মারধর করে চিরতরে শেষকরে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।
নিহত ওই এইচএসসি পরীক্ষার্থীর নাম তামান্না আক্তার কনা (২০)। ঘটনাটি ঘটেছে মনোহরগঞ্জ উপজেলার আলোকদিয়া ভূঁইয়া বাড়িতে। গতকাল সোমবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে নিহত ওই এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মরদেহ পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে লাকসামের নশরতপুর নানার বাড়িতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। তিনি লাকসামের চলন কলেজের বর্তমান শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
নিহত তামান্নার ভাই সজিব আহমেদ বিপ্লব জানিয়েছেন, ছয় মাস পূর্বে মনোহরগঞ্জ উপজেলার নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের আলোকদিয়া ভূঁইয়াবাড়ি এলাকার অহিদুল ইসলামের ছেলে রাজমিস্ত্রি রাশেদুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে তার বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই বিদেশে যাওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী প্রায়ই নির্যাতন চালাত। এ মধ্যে ধারদেনা করে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা তামান্না এইচএসসি পরীক্ষার বিদায় অনুষ্ঠান শেষে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে বলে তাদেরকে জানায়।
তিনি রোববার বিকেলে বাকি এক লাখ টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা নেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে বেদম মারধর করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এদিকে ঘটনার পর থেকে তামান্নার স্বামী রাশেদুল ইসলাম টিটু, শ্বশুর অহিদুল ইসলাম ও শাশুড়ি রোকেয়া বেগম পলাতক রয়েছেন।
নিহত শিক্ষার্থীর ভাই সজীব আরও বলেন, তার বোন রোববার এইচএসসি পরীক্ষার বিদায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্থানীয় চলন কলেজে আসে। স্বামীর বাড়ি যাওয়ার সময় যৌতুকের ২০ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে যায়। কিন্তু তাতেও আমার বোনের রক্ষা হয়নি।
নিহত পরীক্ষার্থীর মা আয়মা জানিয়েছনে, রোববার রাতে তার স্বামী টিটু আমাকে ফোন করে বলে তামান্নার শরীরটা ভালো না, তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে আসেন। গিয়ে দেখি তামান্নার নিথর দেহ।
এদিকে সংবাদ মাধ্যমকে এতথ্য নিশ্চিত করে মনোহরগঞ্জ থানার ওসি জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ এরই মধ্যে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে এ ঘটনায় নিহত ঐ গৃহবধূর ভাই নিজে বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।