সম্প্রতিক সময়ে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় নিযুক্ত নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগম আলোচনায় উঠে আসেন। তার বেশ কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি ঐ এলাকায় আলোচিত হন। যার কারনে তাকে একদিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে বলে জানা যায়। একটি খেলার মাঠে সরকারি প্রকল্পের বেশকিছু ঘর নির্মাণ করার জন্য তিনি আলোচনায় আসেন।
গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব কে এম আল-আমিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মাহমুদা বেগমকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। শনিবার নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বুধবার ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. খবিরুল আহসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে কেন্দুয়ার পাশে মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল গ্রামে ১ একর ৮৭ শতক জমির মধ্যে খেলার মাঠের ৪৬ শতক জায়গা কান্দা শ্রেণিতে পরিবর্তন করে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের কাজ চালিয়ে মাহমুদা বেগম আলোচনায় আসেন। মাঠ রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল করে। একইসঙ্গে স্থানীয় আট বাসিন্দা বাদী হয়ে গেল ৩০ মে আদালতে মামলা করেন।
গত ২ জুন রাতের আঁধারে নির্মাণাধীন দুটি ঘরের গাঁথুনি ভেঙে দেওয়া হয়। পরদিন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বাদী হয়ে ১৯ জনের নামে মামলা করেন। এরপর পুলিশি পাহারায় বাড়ি নির্মাণের কাজ চলে।
এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ২৩টি বাড়ির মধ্যে ১১টি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন। মাঠের পশ্চিম পাশ দখলমুক্ত করে ২৪ শতক জায়গায় ১২টি ঘর বানানো হয়। ১৩ আগস্ট ভোরে দুটি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ৬৩ জনের নাম উল্লেখ ও বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার নেত্রকোনার কেন্দুয়া, মদন ও খালিয়াজুরি এই তিন উপজেলার ইউএনওকে বদলি করা হয়। তাদের মধ্যে কেন্দুয়ার ইউএনও মাহমুদা বেগম মদনে ও মদনের ইউএনও আবুল কালাম। লুৎফর রহমানকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পদায়ন করা হয়েছে। কেন্দুয়ায় নতুন ইউএনও হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যুক্ত কাবেরী জালালকে আর খালিয়াজুরিতে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যুক্ত মো. এরশাদুল আহমেদকে পদায়ন করা হয়। কিন্তু একদিনের পার না হতেই মাহমুদা বেগমকে আবার চট্টগ্রামে বদলি করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে, একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে তিনি কিভাবে হঠাৎ করে খেলার মাঠে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর উঠান, সে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন আসার পর তিনি আলোচনায় আসেন। এরপর তিনি সেখানে ঘর নির্মাণের জন্য পুলিশ সদস্যদের ব্যবহার করেন এবং সেখানকার এলাকাবাসীর মতামতকে উপেক্ষা করেই তিনি প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।