Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / opinion / যে বেদনা নিয়ে তিনি দায়িত্বকাল শেষ করেন, সেই বেদনায় তিনি চিরবিদায় নিলেন: পারভেজ

যে বেদনা নিয়ে তিনি দায়িত্বকাল শেষ করেন, সেই বেদনায় তিনি চিরবিদায় নিলেন: পারভেজ

আজ বুধবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২ টা ৪৯ মিনিটে সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান সাবেক ইসি মাহবুব তালুকদার। তার মৃত্যুতে রীতিমতো শোকের কালো ছায়া নেমে এসেছে পরিবার-স্বজনদের ওপর। সংবাদ মাধ্যমকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন মেয়ে আইরিন মাহবু্ব।

এদিকে সাবেক এই ইসির মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ।

তার স্ট্যাটাসটি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

সমাজে, সংসারে, আমাদের চারপাশে এমন কিছু মানুষ থাকেন, যাদেরকে কখনো বিদায় জানানো যায় না। কর্মে, দীপ্তিতে, লেখায়, আচরণে স্বকীয়তার একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উদ্ভাসিত ও স্থায়ী থাকেন তারা। বিরূপতার মধ্যেও নিজস্বতা ধারণ করায় তারা অনেকের মধ্যে পরিণত হন অনন্য একজনে। সদ্য প্রয়াত মাহবুব তালুকদার সমকালীন বাংলাদেশের এমনই এক আলোচিত চরিত্র।

বহুমাত্রিক, বর্ণময় তার জীবন। উত্থান-পতনের যাত্রী ছিলেন তিনি জীবনভর। ছিলেন সাংবাদিক। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তারও পর আমলা এবং সর্বশেষে সাংবিধানিক পদ নির্বাচন কমিশনার।

এসব পোশাকি পদ ও পদবীর বাইরে তিনি ছিলেন একজন কবি, গল্পকার এবং বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রম্যলেখক।

পেশা ও অবস্থানের এতোসব পরিবর্তনের পরেও তিনি খোশমেজাজের দিলখোলা মানুষ ছিলেন। নিজের আনন্দ ও স্বাধীনতায় জীবন কাটিয়েছেন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় কদাচ আপোস বা সমন্বয় করলেও তিনি তার সত্ত্বাকে জলাঞ্জলি দেন নি।

বঙ্গভবনে কিংবা নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সেই দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

শেষজীবনে তিনি যখন নির্বাচন কমিশনার, তখন রূপান্তরিত হয়েছিলেন ‘বিবেকের কণ্ঠস্বরে’। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন ব্যবস্থার অংশ হয়েও তিনি প্রায়শ সত্যের প্রতিধ্বনিতে পরিণত হয়েছিলেন। সাদাকে সাদা বলার সৎ সাহসে তিনি যেসব উক্তি করেছেন, তা শুধু সাহসী ও দল নিরপেক্ষই ছিল না, ছিল ঐতিহাসিকও। ভবিষ্যতের গবেষকরা তার বক্তব্যের মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রকৃত রূপচরিত্রের সন্ধান পাবেন এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির যথার্থ অবয়বটি দেখতে পাবেন।

তার কথাবার্তা অনেককেই অখুশি করেছে। তিনি অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন। কিন্তু তার কথাগুলোকে অসত্য বা অগ্রহণযোগ্য বলতে পারেন নি কেউই। খুব বেশি না হলেও সমাজে এমন চরিত্র থাকতে হয়। যারা সবকিছুর পরেও বিবেকের কাছে ও নিজের স্বাধীন বিচার-বিবেচনার কাছে দায়বদ্ধ থাকেন।

মাহবুব তালুকদারের ৮০ বছরের দীর্ঘজীবনের সর্বক্ষেত্রেই এমন স্বাতন্ত্রিক বিশিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নকাল এবং কাব্যচর্চা ও কচিকাঁচা আন্দোলনের পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনায় যুক্ত হন। ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশের যে কয়জন স্বল্প সংখ্যক লেখক-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী দেশত্যাগ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তিনি তাদের অন্যতম। তিনি সংযুক্ত ছিলেন মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে।

পরবর্তীকালে তিনি আমলাতন্ত্রে যোগ দিয়ে বঙ্গভবনে পাঁচ বছর অবস্থানকালে বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব করেন। মূল আমলাতন্ত্রের বাইরে থেকে গিয়েও তিনি নানা ঝঞ্জা পেরিয়ে পেশার শীর্ষে আরোহণ করেন। সেখানেও তার শত্রুমিত্রের অভাব ছিল না।

অবসর জীবনে এক প্রকার আকস্মিকভাবেই তিনি আবার লাইমলাইটে আসেন নির্বাচন কমিশনার পদে মনোনীত হওয়ার মাধ্যমে। প্রবলভাবে দল-প্রভাবিত পরিস্থিতিতে তার নিয়োগ অনেককেই বিস্মিত করে। মানুষের বিস্ময় আরো বৃদ্ধি পায়, যখন তিনি দলীয় পদলেহন ও আনুগত্যের ধারেকাছে না গিয়ে নিজের আলাদা অবস্থান তৈরি করেন। যদিও তিনি তার প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু, একাকী ও নিঃসঙ্গ ছিলেন, তথাপি তার বক্তব্য ও অবস্থান স্পর্শ করেছিল জনতার এক বিরাট অংশকে। গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে তার মতামত অনেকের গাত্রদাহের কারণ হলেও মানুষের কাছে মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল।

পূর্ব ময়মনসিংহের নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী পূর্বধলা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করলেও তার জীবনের কিয়দাংশ টাঙ্গাইলে এবং বৃহদাংশ ঢাকায় অতিবাহিত হয়। কর্মক্ষেত্র রূপে তিনি পেয়েছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক, জগন্নাথ কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আমলাতন্ত্র ও নির্বাচন কমিশন। তিনি মিশেছিলেন ইতিহাস ও রাজনীতির বহু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সঙ্গে। নিজেও সাক্ষী হয়েছিলেন অনেক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ঘটনার। বিশেষত, গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রিয়-অপ্রিয় ঘটনাবলি চাক্ষুষ করেছেন তিনি এবং অনেক ক্ষেত্রেই দুঃখিত ও মর্মাহত হয়েছেন।

সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারার যে বেদনা নিয়ে তিনি তার দায়িত্বকাল শেষ করেছিলেন, সেই বেদনার আবহেই তিনি জীবনের কাছ থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করলেন। কিন্তু বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা ও অবাধ নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে তিনি আলোচিত থাকবেন।

এদিকে মাহবুব তালুকদারের মৃত্যুর খবরে গভীর শোক প্রকাশ করে পরিবার-স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীসহ আরও অনেকেই।

About Rasel Khalifa

Check Also

বাঁধন নৌকার লোক বলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হইতো: পিনাকি

ছাত্র আন্দোলনে তারকাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *