মাঝে মধ্যেই বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে এবং দেখা যায় মানুষের জানমালের ক্ষয় ক্ষতি হয় ব্যপকভাবে এবং এই ডাকাতের হাতে পাড়ে অনেক সময় দেখা যায় বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ে যায় এবং যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এমনই একটি ঘটনা ঘটে গেল সম্প্রতি।
কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের বাসটির চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার তিনজনের বাড়িই পাবনা সদরে। বাসটির মালিক পাবনার পরিবহন ব্যবসায়ী সোলায়মান হক এ তথ্য জানিয়েছেন।
সোলায়মান হক বলেন, তাঁর পাঁচটি বাসের মধ্যে কুষ্টিয়া থেকে একটি বাস নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করে। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিনও বাসটি নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিল। বাসটির চালক ছিলেন পাবনা জেলা সদরের বেড়াকপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম। সুপারভাইজার ছিলেন পাবনা জেলা সদরের রাধানগর মহল্লার রাব্বী হোসেন ও হেলপার একই উপজেলার টেবুনিয়া গ্রামের দুলাল হোসেন। বাসে থাকা যে নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তিনিও তাঁর বাসেরই এক সুপারভাইজারের সাবেক স্ত্রী। ওই সুপারভাইজারও পাবনা সদরের বাসিন্দা। কিছুদিন আগে তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়েছে। মেয়েটি এখন ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।
সোলায়মান হক দাবি করেন, তাঁর বাসে থাকা ওই তিন কর্মী দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো দিন কোনো অপকর্মের অভিযোগ তিনি পাননি। তিনি স্বীকার করেন, বাসে সিট খালি থাকলে মাঝেমধ্যেই রাস্তা থেকে যাত্রী তোলা হতো। একইভাবে ঘটনার দিনও কয়েকজন যাত্রী তোলা হয়েছিল।
সোলায়মান হক বলেন, যাত্রীর ছদ্মবেশে তাঁরা যে ডাকাত ছিলেন, এটা কেউ বুঝতে পারেননি। রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি বাসে থাকা সুপারভাইজার রাব্বীর সঙ্গে কথা বলেছেন। ভোরে তিনি ডাকাতির ঘটনা জানতে পেরেছেন। পরে থানায় যোগাযোগ করেছেন। বাসটিসহ বাসে থাকা চালক, সুপারভাইজার, হেলপার এখনো পুলিশের হেফাজতে আছেন।
ঈগল পরিবহনের বাসটি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশী ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের হাত, চোখ, মুখ বেঁধে ফেলে। যাত্রীদের মুঠোফোন, টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। এ সময় ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। তিন ঘণ্টা বাসটি নিয়ন্ত্রণে রাখার পর মধুপুরে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে গেলে ডাকাতেরা পালিয়ে যান। খাদে পড়ে যাওয়ার পর আশপাশের লোকজন উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাত্রীদের উদ্ধার করেন।
টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়া ঈগল পরিবহনের বাসটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের প্রাগপুর থেকে ছেড়েছিল। মাত্র দুজন যাত্রী নিয়ে বাসটি প্রাগপুর ছেড়েছিল। সেখান থেকে আট কিলোমিটার দূরের তারাগুনিয়া এলাকা পর্যন্ত এই পরিবহনের অন্তত চারটি কাউন্টার। প্রতি কাউন্টারে সেদিন দুই থেকে তিনজন করে যাত্রী উঠেছিল। এরপর পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত পরিবহনটির সবগুলো কাউন্টার মিলিয়ে ২৬ জন যাত্রী ওঠেন। যাত্রীবেশে ডাকাতেরা এরপর রাস্তা থেকে বাসটিতে উঠেছিলেন।
বাসটির এক যাত্রী প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। বিপ্লব হোসেন (৪০) নামের ওই যাত্রী মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঈগল পরিবহনের ওই বাসটিতে দৌলতপুর উপজেলার ডাংমড়কা কাউন্টার থেকে উঠেছিলেন। তিনি বলেন, প্রাগপুর কাউন্টার থেকে ছেড়ে আসার পর ডাংমড়কা কাউন্টার থেকে তিনিসহ কয়েকজন যাত্রী ওঠেন। এরপর যথাক্রমে মথুরাপুর, হোসেনাবাদ, তারাগুনিয়া কাউন্টার থেকে যাত্রী তুলে ভেড়ামারা উপজেলায় প্রবেশ করে বাসটি। এরপর লালন শাহ সেতু পার হয়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে ঢোকে। ঈশ্বরদী পর্যন্ত পরিবহনটির সবগুলো কাউন্টার মিলিয়ে ২৬ জন যাত্রী ওঠেন। এরপর যেসব যাত্রী ওঠেন, সবাইকে মধ্যরাস্তা থেকে তোলা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রাগপুর, ডাংমড়কা, হোসেনাবাদ ও তারাগুনিয়ায় ঈগল পরিবহন কাউন্টারগুলোতে কথা বলে একই রকম তথ্য যাওয়া গেছে। প্রাগপুর কাউন্টারের টিকিট মাস্টার আসাদুল ইসলাম বলেন, প্রাগপুর থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে এই ঈগল পরিবহনের বাসটি ছেড়ে যায়। গত মঙ্গলবারও একই সময়ে ছেড়ে যাওয়ার সময় সেখানে দুজন যাত্রী উঠেছিলেন।
বাসে ডাকাতির ঘটনায় আলোচনা ছড়িয়েছে সর্বত্র, ডাকাতদের এমন ঘটনা নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে এই বাসে নারীর সাথে যে দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে এবং দ্রত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার কথা বলছেন অনেকে