অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বার বার অপমানের শিকার হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তারের বিরুদ্ধে। তাকে চোর বলা থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে সবার সামনে লাথিমেরে গাছে তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন শীর্ষকর্মকর্তারা। সুধু এতেই খ্যন্ত দেননি তারা। অবশেষে তার বিরুধে নেওয়া হলো বিশেষ সিন্ধান্ত।
অপমানের তীর ছুড়েছে বারবার। সেই ক্ষতের মধ্যেই এসেছে বদলির আদেশ। এটি একটি বিভাগীয় মামলা, কারণ দর্শানো নোটিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার ও সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসি-ল্যান্ড) সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার এই ধারাবাহিকতা নানা কারণে আলোচিত।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে গত ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলম জানান, দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এর আগে গত ১২ মে ওই উপজেলায় আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে সুপারিশটি পাঠান।
ওই উপজেলায় নির্মাণাধীন ১০০টি বাড়ির প্রতিটিতে গ্রেড বিমে অধিক দূরত্বে নিম্নমানের রড ও রিং ব্যবহার করে অনিয়ম ও ত্রুটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী, উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম সুমন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী নিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম যথাযথভাবে গৃহ নির্মাণ তদারকি না করে সুপারিশপত্রে অভিযোগ করেন। কাজের জন্য. তিনি তার দায়িত্বে অবহেলা ও অবহেলা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তাদের কারও বিরুদ্ধে সরাসরি অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউএনও ও এসি-ল্যান্ড বদলি হলেও পিআইও ও প্রকৌশলীরা তাদের পদে রয়েছেন। চট্টগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বাঘাইছড়ি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম বর্তমানে থানচিতে কর্মরত আছেন।
গত ২৮ এপ্রিল আখাউড়ায় জেলা প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণস্থল পরিদর্শনে যান। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও উপজেলা কর্মকর্তারা সাত্তারা, খোলাপাড়া, চানপুর এলাকায় চরম অপমানজনক আচরণ করেন।
কর্মকর্তারা আলাদাভাবে অবস্থান করছেন। চানপুরে পিআইও এসি-ল্যান্ড একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জেলার একজন কর্মকর্তাসহ শীর্ষ কর্মকর্তা। তা দেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার সঙ্গীকে কেন চোরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে হুমকি দিয়ে চলে যেতে বলেন। মোগড়া ইউনিয়নের খোলাপাড়া সাইটে ওই নারী কর্মকর্তার শারীরিক গঠন নিয়ে শীর্ষ কর্মকর্তা ‘মোটা ঘরের মোটা’ বলে তাকে লাথি মারার কথা বলেন। এসি-ল্যান্ড এবং পিআইওদের চোর, দুর্নীতিবাজ এবং ঘুষখোর হিসাবে গালি দেওয়া হয়েছিল। এসি-ল্যান্ড থেকে জানতে চান তার ঘরে এসি আছে কি না। বলে, ‘তোমার বাবা কী করছে?’ জনসাধারণের এই আচরণ ঘটনাস্থলেই শেষ হয়নি, কর্মকর্তার অডিটোরিয়ামে, তার অফিসে এবং তার বাংলোতে ভরা মিটিংয়ে তারা বারবার অপমানিত ও অপমানিত হয়েছেন। সূত্র জানায়, এটি শিষ্টাচারের সব সীমা অতিক্রম করে। সূত্র জানায়, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বক্তব্য দেওয়ার জন্য মাইক্রোফোন চালু করতে চাইলে তা চালু করা হয়নি। ২-৩ চেষ্টা করার পরে এটি চালু করার পরে, শীর্ষ কর্মকর্তা বললেন, ‘আপনার মাইক্রোফোনের দরকার নেই। আমি এমন ব্যবস্থা করব যাতে সারা বিশ্ব তোমাকে চিনবে। তিনি মাইক্রোফোন ছাড়াই বললেন।
বৈঠক শেষে তিনি কর্মকর্তার কক্ষে গেলে রুমানা আবারও আক্তারকে ‘বিশ্ব চোর’ বলতে থাকে। তিনি তার কক্ষে বাইরের কর্মকর্তাদের (সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী, ফোর লেনের প্রকল্প পরিচালক ও সমাজসেবা কর্মকর্তা) বলেন, চোরের দিকে তাকান। এরপর ২৯ এপ্রিল আখাউড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের নিজ বাংলোতে ডেকে নেন তিনি। এসি-ল্যান্ড ও পিআইওর সামনে আবারও অপমানিত হলেন রুমানা আক্তার। তিনি বলেছিলেন যে তিনি লাথি মেরে গাছে তুলে দেবেন। কর্মকর্তারা অধস্তনদের এই আচরণ নীরবে সহ্য করে।
33 তম ব্যাচের মাদারীপুর জেলা সদরের বাসিন্দা রুমানা আক্তার আখাউড়া 5 জুলাই 2021 তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। 10 মাস 17 দিন চাকুরীর পর 22শে মে তিনি এখান থেকে চলে যান। আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৬৫৩টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১ম ধাপে ৪৫টি, ২য় দফায় ৬০৬টি এবং ৩য় ধাপে ২টি ঘর বরাদ্দ রয়েছে।
আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম জানান, প্রায় ৬০০ ঘর নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন ইউএনও রুমানা আক্তার। তিনি যোগদানের আগে 50টি ঘর সম্পন্ন হয়েছিল। যোগদানের পর তিনি ৯টি স্পটে ২০০টি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ঘরের সব কাজ একসঙ্গে দেখা কঠিন ছিল। পরিদর্শন করার সময় সবকিছু ঠিক ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ঠিকাদাররাই অনিয়ম করেছে। কাজের ফাঁকগুলি ঠিকাদার, পিআইও এবং প্রকৌশলীরা ভালভাবে বোঝেন। রড বা রিং কোথায় থাকবে তা অন্যদের ধরার বা অভিযোগের সুযোগ নেই । ব্যক্তি আকৃষ্ট করছে এখানে কাজ করছে তা নিয়ে সমর্থদের প্রশ্ন। নারী নারীকে গৃহিণী সক্রিয় মন্তব্য করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এ বিষয়ে জানার জন্য জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফ আহমেদ রাসেলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
রুমানাকে বদলী করা হয়েছে। তবে তার বিরুধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তার তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। রুমানা বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হলে তার বিরুধে নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছ এই অবিযোগের তদন্তে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা