এবারের 12তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা 62টি আসনে জয়ী হয়েছে। যাদের মধ্যে ৫৮ জন আওয়ামী লীগ নেতা। দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়লেও দলের বাইরে ভোট দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তারা।
তবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হলেও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য সংসদে সরকারবিরোধী অবস্থান নিতে আগ্রহী নন। কারণ এতে স্থানীয় পর্যায়ে ও দলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্ব ও প্রভাব কমে যাবে। বরং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংসদে থাকলে নানাভাবে লাভবান হতে পারে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন বিজয়ী সংসদ সদস্যরা।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতকে বাদ দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর ১০ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। ওইদিন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করে। পরদিন শপথ নেন নতুন মন্ত্রিসভা।
দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। তারা 11টি আসনে জয়ী হয়েছে। এছাড়া ৬২টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া এবার বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার পার্টি থেকে একজন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা তাদের ৬২টি আসনের বিপরীতে সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি আসন পাবেন।
এর সঙ্গে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি যুক্ত হলে তাদের সংরক্ষিত আসন দাঁড়াবে ১১টি। এখন বড় প্রশ্ন হলো এসব আসনে প্রার্থী কীভাবে নির্ধারণ করা হবে।
ইতোমধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের অবস্থান জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের পদাধিকারী হলেও আপাতত তাদের সংসদীয় দলে নেওয়া হবে না। তাই স্বতন্ত্রদের আলাদা জোট গঠন করে সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যকে স্বতন্ত্র জোটের সংসদীয় দলের নেতা ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যকে স্বতন্ত্র জোটের সংসদীয় দলের উপনেতা করার ইস্যু চলছে। আলোচনা স্বতন্ত্র এই জোটের নেতা বিরোধী দলের নেতার মর্যাদা পাবেন তাও নিশ্চিত নয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। নতুন সংসদের অধিবেশন উপলক্ষে সংসদের কক্ষে সংসদ সদস্যদের আসন বিন্যাসের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। জাতীয় দলের সদস্যদের পাশে স্বতন্ত্র সদস্যদের জন্য আসন রয়েছে। বিরোধী শিবিরে সামনের সারির আসন বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র সদস্যের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে।
স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত একাধিক সংসদ সদস্য বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরই সংরক্ষিত নারী আসন নির্বাচন, স্বতন্ত্র সদস্যদের জোট করে সংসদীয় দল গঠন এবং স্বতন্ত্ররা বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবেন কি না- এসব বিষয়। পরিষ্কার হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য একে আজাদ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। আমরা তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল-৪ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ যুগান্তরকে বলেন, প্রায় সব স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যই দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। তারা বিভিন্ন পদে থেকে রাজনীতি করেছেন। তারা দল থেকে বাদ পড়তে চায় না। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা তা অনুসরণ করব।
ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ড. খসরু চৌধুরী বলেন, আমি আওয়ামী পরিবারের সদস্য। বিরোধী দলে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। তবে নেত্রী (শেখ হাসিনা) যে সিদ্ধান্তই দেবেন আমি তা মেনে নেব।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের মধ্যে ৪৩ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন।
14 দলের সদস্য নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে চারটি জয়। বাকিরা জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পরাজিত করে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র বিজয়ী সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৫৭ জন আওয়ামী লীগে রয়েছেন। তারা দুজনই পদে না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তাদের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
আর বাকি তিনজনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে নির্বাচিত এসএকে একরামুজ্জামান অ্যাড.