সম্প্রতি বিদায় নেওয়া ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান পদ্মা নদীর দুই পারের বিভাজন নিয়ে পুলিশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন। এই বিভাজনের ফলে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন এবং তাদের সমস্যার শুরু হয়েছে শেখ হাসিনার পতনের পর।
তথ্য অনুযায়ী, হাবিবুর রহমান কোনো ‘দাড়িওয়ালা’ বা ‘টুপি পরা’ কর্মকর্তাকে সামনে দেখতে চাইতেন না। তাঁর এই পদক্ষেপের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন ১৮তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান, যিনি বর্তমানে রংপুর মেট্রোপলিটন কমিশনার হিসেবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
মনিরুজ্জামান অতিরিক্ত ডিআইজি (গোপনীয়) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সারা দেশে পুলিশ কর্মকর্তাদের রাজাকার, বিএনপি-জামায়াত হিসেবে চিহ্নিত করার কাজ সম্পন্ন করেন। প্রতিদিনের কাজের ফিরিস্তি তিনি হাবিবকে সরাসরি জানাতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদকে তার নির্দেশে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, হাবিবুর রহমান ঢাকার এসপি হিসেবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। ঢাকার কনস্টেবল প্রার্থী না পেলে গোপালগঞ্জ জেলার প্রার্থীদের ঢাকা জেলায় নিয়োগ দিয়ে ছিলেন তিনি।
ঢাকা জেলায় অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন তৎকালীন এসপি মিজানুর রহমান, যিনি বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় কারাভোগ করছেন। ১৫ বছরে ঢাকা জেলায় চাকরি পাওয়া অধিকাংশ কনস্টেবল গোপালগঞ্জ বা ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা। ঢাকা জেলার এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর হাবিবুর রহমান পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অ্যাডিশনাল ডিআইজি হিসেবে যোগ দেন।
১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন সদ্য চাকরিচ্যুত ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। চাকরিকালে ভোলার লালমোহনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণের দায়ে তিনি বরখাস্ত হন। পরে চাকরি ফিরে পাওয়ার পর তিনি সিন্ডিকেট বাণিজ্য শুরু করেন।
ডিএমপিতে এডিসি (সদর) হিসেবে প্রথমে ২০তম ব্যাচের জেসমিন বেগমকে নিয়োগ দেন। তিনি পদায়ন ও পদোন্নতিতে অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব নেন। ১২শ এএসআই পদোন্নতির সময় হাবিব ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ সংগ্রহ করেন। এরপর এডিসি হেডকোয়ার্টার হিসেবে দায়িত্ব নেন ২২তম বিসিএসের অ্যাডিশনাল এসপি মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, যিনি পদ্মার দুই পারের বিভাজনে কাজ করেন।
হাবিব বাংলাদেশ পুলিশের আঞ্চলিকতার সূচনা করেন এবং ঢাকার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের পর আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে জেসমিনকে এবং ডিএমপিতে অ্যাডিশনাল এসপি আরএম ফয়েজুর রহমানকে নিয়োগ দেন। বিভিন্ন জেলায় নিজের লোক বসান এবং উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে পদায়ন, পদোন্নতির বিনিময়ে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন।