আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম মেশিন এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলে সেটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশন কিভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য করা যায় সে বিষয়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে বৈঠকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য দলীয় প্রতিনিধিদের মতামত নেন। তবে কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রাখতে পারছে না যদি না নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণ নিয়েো শুরু হয়েছে সমালোচনা, তবে কত আসনে ইভিএম এ নির্বাচন করা হবে সে বিষয়ে জানিয়েছে ইসি।
১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বড় সিদ্ধান্ত আমাদের নিজেদের। রাজনৈতিক দল নয়, ইসি ভোট পরিচালনা করবে। নির্বাচন অনুষ্ঠান করা ইসির বড় দায়িত্ব। ভোট যাতে আরো নির্বিঘ্নে, সুষ্ঠুভাবে হয়, তা নিশ্চিত করবে ইসি। যারা ভোট দিতে আসবেন, সেটাই আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলো যা বলেছে তা আমাদের মূল বিবেচনায় আসে না। কিন্তু আমি বিবৃতিগুলো বিবেচনায় নিয়েছি। একই সময়ে লক্ষ-কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে কেন্দ্রে আসেন, যাতে তারা ভালোভাবে ভোট দিতে পারেন সেটা আমরা খেয়াল রাখবো। দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত (ইভিএম ব্যবহার) নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। আগের দিন কমিশন বৈঠকে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিইসি।
তিনি বলেন, পাঁচ মাসের বেশি হয়ে গেছে। আমরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমি শুরু থেকেই বলেছি, আমি এটি কতটা নির্ভরযোগ্য তা পরীক্ষা করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন দল, টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের ডেকেছি, অনেকের মতামত নিয়েছি। এর ওপর নির্ভর করে, কমিশন সব দলের মতামত বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা ১৫০টিতে ইভিএম, ১৫০টি ব্যালট এভাবে ভাগ করে ইভিএম ব্যবহার করবো।
আমরা বিভিন্ন দলকে বলেছি, আপনার টেকনিক্যাল পারসনদের নিয়ে আসুন। তাদেরও আনা হয়েছে। আজ পর্যন্ত আমরা ইভিএম নিয়ে যে ভ্রান্ত তথ্য চাউর হয়েছে -এ এই জাতীয় বক্তব্যের কোনও নির্ভরযোগ্যতা খুঁজে পাইনি – এখানে ভোট দিলে ওখানে চলে যাবে, এর কোনো নির্ভরযোগ্যতা পাইনি এবং তারাও আমাদের দেখাতে পারেনি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সম্ভব হলে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করব। এখন সম্ভব হবে কিনা জানি না। ইভিএম যে কথাগুলো চালু আছে, সেগুলো নির্বাচনের পরেও কিন্তু বোঝা যাবে। রেজাল্টের ধরন দেখা গেলে… সেটাও বোঝা যাবে। আমরা পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যালট পেপারে যে সমস্যা হয় তার ফলাফল ইভিএমে ভালো পাওয়া যাবে। কারণ, এতে সহিংসতা, কারসাজি সম্ভব নয়। না কোনো দলের দাবির পক্ষে, না বিপক্ষে। বেশ কয়েকটি দল ইভিএমের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। আমরা সবার মতামত নিয়েছি। তবে আমরা কমিশন সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছি, আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা আপাতত ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করব।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। তারা দীর্ঘদিন ধরে পর্যালোচনা করেছে। সব মিলিয়ে বুধবার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোনো তাড়াহুড়া নয়। আমরা ভবিষ্যৎ বলতে পারব না। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও সংকট ছিল, ২০১৪ সালের নির্বাচনেও সংকট ছিল। ইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল মন্তব্য করেছেন, নির্বাচন নিয়ে সংকট হবে কি না তা বলা যাবে না।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করবে কোন ধরনের সংকট জাতে সৃষ্টি না হয়, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। তবে সে সময় যে সরকার থাকবে তারও কিছু দায়িত্ব অবশ্যই থাকবে, এমনটি জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।