পদ্মা সেতু এক নজর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছে লাখো মানুষ। মানুষের মন হয়ে গিয়েছিল সম্পূর্ণভাবে অস্থির। মন ছুটে গিয়েছিল পদ্মা সেতুকে একবার কাছ থেকে দেখার জন্য। মানুষের মন একবার ছুটে গেলে তা আটকাতে পারেনা কেউ। সম্প্রতি জানা গেছে জনগনের ভাষ্য এমনি যে আইজাকা ব্রিজে না উঠলে কাইলজা ফাইটা মইরাই যাইতাম।
আমরা যখন দেখলাম একটা দুচাকার গাড়ি যাচ্ছে, আমরা ঠিক করলাম যেভাবেই হোক ব্রিজে উঠব। আমরা তারের বেড়ার উপর দিয়ে সেতুতে উঠলাম। আমি খুব মজা পাচ্ছিলাম, ভাবলাম ওই দিকটা ইয়ামুগা। কিন্তু সেতুর অর্ধেক যাওয়ার পর র্যাব পুলিশ আইসাকে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা শুরু করে। আমার শরীর ফুলে গেছে। আমার খাবার খেতে সমস্যা নেই, আমি বিরিজে উঠছি। আইজাকা ব্রিজে না উঠলে কাইলজা ফাইটা মইরাই যেতাম। ‘
নিয়ম ভঙ্গ করে, উত্সাহী জনতা পদ্মা সেতুতে উঠেছিল এবং শেষ পর্যন্ত নমল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মার খেয়েছিল। তবে, একজন বলেছেন যে তিনি মার খাওয়ার জন্য দুঃখিত নন। তিনি বলেন, সেতুতে না উঠলে তিনি মারা যেতেন।
প্রধানমন্ত্রী বিনা অনুমতিতে সেতুটি উদ্বোধন করার পর দুপুর ১টার দিকে বিপুল সংখ্যক মানুষ সেতুতে প্রবেশ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা কৌতূহলী মানুষকে সেতু থেকে নামাতে লাঠিও ব্যবহার করে।
প্রধানমন্ত্রী সেতু পার হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বহনকারী কয়েকটি বাসও পারাপার হয়। দুপুর ১টার দিকে ব্রিজের উল্টো দিক থেকে পুলিশ পাহারায় কিছুক্ষণের জন্য শিথিল হয়ে পড়ে। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও কয়েকটি মাইক্রোবাস সেতুতে উঠে।
একইসঙ্গে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে কোথাও কোথাও ভাঙা মাটি সরে যাওয়ায় উৎসুক সাধারণ মানুষ বেড়ার নিচের মাটি সরিয়ে সেতুতে প্রবেশ করে। তারা মাওয়া প্রান্ত থেকে জাজিরা প্রান্তে ছুটতে থাকে। এসময় তারা ব্রিজে সেলফি তোলা, ভিডিও রেকর্ডিং এবং মাওয়া পাশের ইলিশ ঝর্ণায় নেমে হাত-মুখ ধোয়া শুরু করে।
অনেকেই তখনই ভেবেছিলেন, সরকার সেতুটি খুলে দিয়েছে। এমন বিভ্রান্তিতে খাবার ও খেলনা বিক্রি করতে হকাররা সেতুতে ওঠে।
তবে কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ শুরু করে। যানবাহন ও লোকজনকে সেতু থেকে নামানোর জন্য তারা লাঠিচার্জও করে। উৎসুক জনতা ও যানবাহন বাহিনীর সদস্যদের প্রতিরোধের মুখে ফিরে আসে।
পদ্মা সেতুতে মারধরের পর মিন্টু ও তার বন্ধুরা উত্তেজিত হয়ে ফিরে আসে।
মিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, একটি দুচাকার গাড়ি যেতে দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যেভাবেই হোক সেতুতে উঠব। আমরা তারের বেড়ার উপর দিয়ে সেতুতে উঠলাম। আমি খুব মজা পাচ্ছিলাম, ভাবলাম ওই দিকটা ইয়ামুগা। কিন্তু সেতুর অর্ধেক যাওয়ার পর র্যাব পুলিশ আইসাকে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা শুরু করে। আমার শরীর ফুলে গেছে।
‘আমার খাবার খেতে সমস্যা নেই, আমি বিরিজে উঠছি। আইজাকা যদি ব্রিজে না উঠত, আমি কাইলজা ফাইত্তা মইরাই যেতাম। ‘
উজ্জ্বল নামে আরেক মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে শার্ট ছুড়ে বেড়ার নিচে সেতু এলাকা থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, শালীর মেয়ে হাওয়ায় উঠবে, তাই না? সবার শখ দেখে বিরাজে গেলাম, পুলিশ পিটিয়ে লাল করে দিল। কামদা এটা ঠিক করেনি। ‘
ঘটনার শুরুতে জামাল নামে এক যুবক সেতুর বেড়ার ওপর উঠে পড়েন। তিনি বলেন, ব্রিজে উঠে দেখি উল্টোদিক থেকে একটি মোটরসাইকেল মাওয়ার দিকে আসছে। লোকটা একাই ছিল। আমি তারের সংকেত দিয়ে থামিয়ে বললাম, ‘ভাই ব্রিজ পার হচ্ছেন, আমাকেও নিয়ে যান’।
‘প্রথমটি আমাদের আগে মোটরসাইকেলে চলে গেল, পরেরটিতে আমি ছিলাম। আমরা দুজন কথা বলতে বলতে ব্রিজ থেকে নামলাম, আমাগোর আগেই র্যাব-পুলিশ বাধা দেয়। ড্রাইভার ভাই বললেন, বেড়াতে এসেছি। ‘
‘তৎক্ষণাৎ তিনি আমাদের লাঠি দিয়ে বাড়ি দেন এবং আমরা মোটরসাইকেল চালিয়ে ফিরে আসি। আমি মোটরসাইকেলে থাকা ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে কিনা। জানিনা সে কতটা, খালি হাতে আসছি। ‘
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, “হঠাৎ সেতুর সীমানা প্রাচীর টপকে লোকজন ঢুকে পড়ে। আমরা মুহূর্তের মধ্যে ওই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করি।”
বিপরীত দিক থেকে মোটরসাইকেল ও গাড়ি কীভাবে সেতুর ওপর উঠেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেতুতে গাড়ি বা মোটরসাইকেল উঠেছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মোহাম্মদ পাশা বলেন, “কার ও মোটরসাইকেল কিভাবে সেতুতে উঠল সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।” সেতুর ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে। তাত্ক্ষণিকভাবে উভয় প্রান্ত থেকে আমরা ভিড়কে নিয়ন্ত্রণ করি। আমরা গাড়ি, মোটরসাইকেল বা লোকজনকে সেতু পার হতে দিইনি।
প্রসঙ্গত, আজকে মানুষ মরিয়া হয়েও পদ্মা সেতুতে উঠেছে। তাদের এক ধরণের প্রতিজ্ঞা করেই উঠেছে যেকরেই হোক আজ পদ্মা সেতুতে উঠবই তাতে যা আছে কপালে। যেমন তেমনি কাজ করলেন উৎসুক জনতা। পদ্মা সেতুর উপর ঠিক উঠেই ছাড়লেন