রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস বিভাগের ভল্ট থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুল্ক বিভাগ জানায়, চুরি যাওয়া সোনার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
রোববার রাতে ঢাকা কাস্টমস বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সোনা চুরির এ ঘটনা গত শনিবার ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে। তবে গতকাল রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শুল্ক বিভাগ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে জানান, শুল্ক বিভাগের গুদামের মূল্যবান মালামাল রাখা একটি স্টিলের আলমারির লকার। বিমানবন্দরের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে আরও জানান, জব্দকৃত মালামাল যথারীতি গুদামে রেখে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনিসহ চারজন শুল্ক বিভাগ ত্যাগ করেন।
মামলায় আরও বলা হয়, গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন খবর পেয়ে ঢাকা শুল্ক বিভাগের কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার গুদাম পরিদর্শন করেন। তারা গিয়ে দেখেন গুদামের একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা। গুদামের পূর্ব পাশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইউনিটের টিনের কিছু অংশ কাটা দেখা গেছে। পরে তারা চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও গুদামের দায়িত্বে থাকা চার কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
মামলার বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদাম থেকে কোনো মূল্যবান জিনিস চুরি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দেন। .
পরে, গুদাম কর্মকর্তারা দেখতে পান যে ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আটক ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা আটক রসিদ (ডিএম) অনুসারে চুরি হয়েছিল।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রাত সাড়ে ৯টা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কেউ গুদামের তালা ভেঙে স্বর্ণ নিয়ে যায়।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ চুরির রহস্য উদঘাটনে গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বিমানবন্দরের ভেতরে গুদামের দায়িত্বে ছিলেন চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন কনস্টেবল। তাদের মধ্যে চার সরকারি রাজস্ব কর্মকর্তা হলেন মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আখতার শেখ। বাকি চার সিপাহী হলেন রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার।
শুল্ক দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে চুরি হওয়া সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এত দিন বিমানবন্দরের গুদামে এত সোনা রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ জানান, গুদামে অনেক লকার থাকলেও একটি লকার থেকে সোনা চুরি হয়েছে। এই স্বর্ণগুলি ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছিল। আমি গুদামে অটোমেশনের কাজ শুরু করি। এদিকে এ ধরনের ঘটনায় আমি লজ্জিত ও বিব্রত।
ওই কর্মকর্তা জানান, আট দিন আগে গুদামের অটোমেশনের কাজ শুরু হয়। এ কাজের অংশ হিসেবে গুদামে স্বর্ণ গণনা শুরু হয়েছে। তার ভাষ্যমতে এরই মধ্যে সোনা চুরির ঘটনা ঘটেছে। গুদাম অটোমেশন শুরু হওয়ার সাথে সাথে এটি ধরা পড়বে; তাই লকার ভাঙার ‘নাটক’ তৈরি হয়েছে।
বিমানবন্দরের ভিতরের সমস্ত এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার আওতায় রাখা হয়েছে। পুরো বিমানবন্দরটি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সহ বেশ কয়েকটি সরকারী সংস্থা দ্বারা কর্মরত রয়েছে। এত নিরাপত্তার মধ্যে গুদাম থেকে সোনা চুরি হওয়ার ঘটনা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, বিমানবন্দরটি একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা (কেপিআই)। এমন জায়গা থেকে কিছু চুরি হলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। পুলিশের কাছে সোনা চুরির অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা তদন্ত করে জানা যাবে।