Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / যেখানেই যাই ঘুরে-ফিরে সেই একই প্রশ্ন, কাঁচা মিথ্যা কীভাবে বলতে পারে: রুমিন ফারহানা

যেখানেই যাই ঘুরে-ফিরে সেই একই প্রশ্ন, কাঁচা মিথ্যা কীভাবে বলতে পারে: রুমিন ফারহানা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় ঘটেছে হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে বিএনপি নির্বাচনে যেতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এদিকে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তবে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম মেশিন এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা দেখা দিয়েছে নানা ধরনের প্রশ্ন এবার এ বিষয়ে কথা বলেছেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনপি দলীয় হুইপ রুমিন ফারহানা।

যেখানেই যাই, ঘুরে ফিরে সেই একই প্রশ্ন। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে প্রশ্নের সংখ্যা। আদৌ কি নির্বাচন হবে? কেমন হবে নির্বাচন? বিএনপি ও বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেবে? সরকার কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেবে? সরকার পদত্যাগ না করলে বিএনপি কি নির্বাচনে যাবে? মানুষ ভোট দিতে পারে? ন্যূনতম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন হলে সেটা কি ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো হবে?

এমন প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপির লাভ কী? গত ১৭ বছরে আমরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিরাজনীতিকরণ, ভিন্নমত দমন এবং কার্যত একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা দেখেছি, এই প্রশ্নগুলি এখনও আমাকে আশাবাদী করে তোলে। সাধারণ মানুষের এখনও রাজনীতিতে আগ্রহ রয়েছে, স্থানীয় থেকে জাতীয় প্রতিটি নির্বাচনে বারবার প্রতারণার শিকার হওয়া সত্ত্বেও মানুষ দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে, যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারে।

বলা হয়ে থাকে যে, এই মাটিতে একটি দলীয় সরকারের অধীনে শুধুমাত্র একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেটি ছিল ১৯৫৪ সালে, যেখানে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিজয় লাভ করে। স্বাধীনতা-পরবর্তী চারটি নির্বাচন যেগুলো ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল সেগুলো হল ৯১, ৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮। এগুলোর প্রত্যেকটিই হয়েছে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সংবিধানে এ ধরনের সরকার ব্যবস্থা সংযোজনের জন্য আন্দোলন করে আসছে, সংসদ বর্জন করছে। সে আলোচনা আপাতত বাদ দেওয়া যাক, তাহলে প্রশ্ন জাগে এই কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবে কি না? বিশেষ করে যখন নির্বাচন ছাড়াই টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা সরকার একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ধরে রাখার সাহস বা ক্ষমতা রাখে। তাই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কারচুপি করে সরকার ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা করছে তা বোঝার জন্য রাজনৈতিক প্রতিভাবান হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু সরকার তার পছন্দের উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে কৌশলগত ভুল করছে।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনকালীন, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের দাবির জবাবে বরাবরের মতোই সংবিধানকে ধর্মগ্রন্থের মতো করে উপস্থাপন করে, সংবিধানের দোহাই দিয়ে, আদালতকে সামনে এনে সরকার সেটা বারবার নাকচ করছে। অর্থাৎ, সরকার চায় তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন সংসদ নির্বাচন হোক, এমনকি ৩০০ আসনের এমপিরা সংসদ সদস্য হলেও। সরকারের বক্তব্য হলো, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, তাই তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বাধা নেই। এবং সরকারী বিবৃতি অনুসারে, ক্ষমতাসীন সরকার সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে ‘সুবোধ বলকে’র মতো নির্বাচন কমিশনকে সব ধরণের সহায়তা দেবে।

নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের বক্তব্যে অত্যন্ত নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন অপরিহার্য। তবে বিএনপি স্পষ্টভাবে বলেছে, ব্যতিক্রমী শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দেখলেও তারা নির্বাচনে যাবে না। এমনকি বিএনপি বলেছে, বিএনপির নেতাদের নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলেও সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে না, তাই এ ধরনের কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু তারপরও সরকারের উচিত ছিল তাদের বক্তব্যের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ করার চেষ্টা করা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেহেতু একের পর এক কাজ করে যাচ্ছে, তাতে নির্বাচনের সোয়া এক বছর আগেই মানুষের কাছে হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছে তারা।

যে কমিশন দায়িত্ব নেয় এবং বিএনপিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মতো নির্বাচন নামক যুদ্ধের ময়দানে থাকতে বলে, সিইসি নির্বাচনের ফলাফল তাদের পক্ষে পেতে, তাতে জনগণের ন্যূনতম আস্থা থাকবে কিনা প্রশ্নই ওঠে না। কমিশনের এই বক্তব্য থেকে এটা খুবই স্পষ্ট যে তারা নির্বাচনকে একটি কুস্তি ম্যাচ হিসেবে বিবেচনা করে, যেখানে জয়-পরাজয় নির্ভর করে শক্তি দেখানোর ক্ষমতার ওপর। এরপর সিইসিসহ পুরো নির্বাচন কমিশন এমনভাবে বলেছেন এবং আচরণ করেছেন যাতে খুব সাধারণ জ্ঞানে বোঝা যায় কমিশন সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছে। সেটা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারদলীয় এমপিকে এলাকায় থাকতে দিয়ে নাকে খত দেওয়া, সেই নির্বাচনে হঠাৎ ফল ঘোষণা বন্ধ করে দিয়ে সরকারদলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সর্বশেষ সরকারি দলের ইচ্ছায় সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হবার মতো আসনে (১৫০) ইভিএমে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে প্রমাণিত হয়।

দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ধরেই নিয়েছে আগামী নির্বাচন নিশ্চিতভাবেই আগের দুটি পদ্ধতির কোনোটিতেই হবে না, তবে নতুন কিছু হবে। অনেকদিন ধরেই অনেকে ধারণা করছিলেন, এবার ইভিএমে কারচুপির মাধ্যমে হবে। ভারত, ব্রাজিল ও ভুটান ব্যতীত বিশ্বব্যাপী মাত্র কয়েকটি দেশের জাতীয় নির্বাচনের জন্য গৃহীত প্রযুক্তির প্রতি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত আগ্রহ এই সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

সম্প্রতি আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এই রোডম্যাপের জন্য প্রদত্ত বুকলেটের মূল অংশটি হল ইভিএমের ন্যায্যতা সম্পর্কিত বক্তৃতা। আর এটাকে জায়েজ করার জন্য নির্বাচন কমিশন যা করেছে তা শিশুসুলভ মিথ্যাচার। মিডিয়ার মাধ্যমে একেবারে জনপরিসরে প্রকাশিত তথ্য নিয়ে এমন ‘কাঁচা মিথ্যা’ কেউ বলতে পারে দেখে স্তম্ভিত হতে হয়।

ইসির প্রকাশিত ব্রোশিওর অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে ২৯টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে, যার মধ্যে ১৭টি দল কোনো না কোনোভাবে ইভিএমের পক্ষে ছিল। ১২টি দল সরাসরি ইভিএমের পক্ষে ছিল। কিন্তু সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত প্রস্তাব পর্যালোচনা ও দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ইসি যে ১৭টি দলকে ইভিএমের পক্ষে বলে প্রচার করেছে তার মধ্যে ৩টি দল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে। ইভিএম নিয়ে ১ দলের কোনো মতামত ছিল না। আর ৯টি দল ইভিএম নিয়ে বিভিন্ন শর্তের কথা বলেছে। মাত্র চারটি দল সরাসরি ইভিএমের পক্ষে ছিল। এই চারটি দল হলো আওয়ামী লীগ, তরিকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি ও বিকল্পধারা। এর মধ্যে তরিকত ফেডারেশন ও সাম্যবাদী পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অংশীদার। আর গত সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারার সঙ্গে এক ধরনের নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছিল।

কর্মপরিকল্পনায় ইসি দাবি করেছে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট সরাসরি ইভিএমের পক্ষে। কিন্তু ১৮ জুলাই দলটি ইসিতে যে লিখিত প্রস্তাব পেশ করে, তাতে সরাসরি ইভিএমের বিরোধিতা করা হয়। ইভিএম নিয়ে দলটির পক্ষ থেকে ইসিতে দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইভিএম মেশিনের পরিবর্তে স্বচ্ছ ব্যালট পেপারের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসি এই গ্রুপের অবস্থান সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছে।

ইসি তাদের কর্মপরিকল্পনায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে ইভিএমের পক্ষে দেখিয়েছে। ১৯ জুলাই সংলাপে অংশ নেওয়া দলটির ইসিতে লিখিত প্রস্তাবে ইভিএমের কোনো উল্লেখ ছিল না; বরং তাদের প্রস্তাব ছিল ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে পরিচালনা করা’।

রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পরিবর্তনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ড. আহসান হাবিব খান (সিইসি অসুস্থ এখন তিনি সিইসির দায়িত্বে) এবং একটি জাতীয় দৈনিক আলমগীরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন মো. কিন্তু তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত জুলাইয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের শেষ দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করে না।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শেষ করছি। ইসির রোডম্যাপ ঘোষণার দিন একটি নামকরা চ্যানেল আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আমি বলছি বেশিরভাগ দল ইভিএমের বিপক্ষে কিন্তু ইসি বলছে ২৯ দলের মধ্যে ১৭টি দল ইভিএমের পক্ষে। আমি হোঁচট খেয়েছি। কারণ, আমি ভেবেছিলাম সংলাপের সময় অধিকাংশ দলই ইভিএমের বিপক্ষে ছিল; এমনকি সিইসিও এ কথা বলেছেন। তবে ইসি এমন ‘অশোধিত মিথ্যা’ বলতে পারবে বলে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি। ইভিএম নিয়ে এই ‘কাঁচা মিথ্যা’ প্রমাণ করে যে নির্বাচন কমিশন ইভিএমে আগামী নির্বাচন করতে মরিয়া। আর এই মরিয়া প্রমাণ করে আগামী নির্বাচনে ইভিএম কারচুপির মাধ্যমে বিজয় নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আরো যোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন আগে যা বলেছিলেন তা এখন আর বলছে না, সুর পাল্টে দিয়েছে। এটাই হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের একটি বড় ধরনের দুর্নীতি। এটা দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। কারচুপি অবশ্যই ঘটবে এবং নির্বাচন কমিশন তার এই কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিরপেক্ষতা হারিয়েছে এবং হয়েছে জনসাধারণের প্রশ্নের সম্মুখীন।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *