Thursday , September 19 2024
Breaking News
Home / Countrywide / যুবকের জীবনের করুণ গল্প শোনার পর কেঁদে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী

যুবকের জীবনের করুণ গল্প শোনার পর কেঁদে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী

ফরিদপুর জেলার সোহানপুর গ্রামের ভূমিহীন কৃষক পরিবারের সন্তান পিরু মোল্লা ৪০তম বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। এই অবস্থানে পৌঁছতে তাকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে।

একসময় অন্যের জমিতে সেচ দেওয়া, চুক্তিতে ধান-পাট কাটা, মা-বাবার সঙ্গে জমিতে আগাছা পরিষ্কার করা ছিল তার পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। ঝড়ের রাতে বাড়ির ছাউনি উড়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি ঘুমাতে পারেননি। সেই অবস্থান থেকে আজ তিনি সহকারী মহা হিসাবরক্ষক, সংযুক্ত আছেন ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমিতে (ফিমা)।

তার গল্প শুনেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিসিএস কর্মকর্তার করুণ কাহিনী প্রধানমন্ত্রীর চোখে জল এসেছিল। পরে তাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে এই স্বপ্নদ্রষ্টার গল্প শোনেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে চার বিসিএস ক্যাডার তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। পিরু মোল্লা তাদের একজন। তিনি বলেন, ‘আজ আমি স্বপ্ন পূরণ ও ভাগ্য পরিবর্তনের গল্প বলতে এসেছি। এটা আমার মতো হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এই ভাগ্যবদল চিরায়ত বাংলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোটি প্রাণের।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে পিরু মোল্লা বলেন, ‘আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে পারব কি না, সেই আশ”ঙ্কা ছিল। আমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্নটা প্রায় শেষই হতে যাচ্ছিল। যদি না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ পেতাম। কেননা অর্থের অভাবে কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও আমি ভর্তি পরীক্ষার ফরম তুলতে পারিনি।

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে, আমাকে মাঝে মাঝে আমার ভাইয়ের সাথে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যেতে হত। প্রথম বর্ষের বেশিরভাগ সময় টিউশনি না হওয়া পর্যন্ত সকালের নাস্তাও খেতে পারিনি। ১৫ টাকায় লাঞ্চ, ১২ টাকায় ডিনার; এই মোট ২৭ টাকা দুই বেলার খাবারের খরচ কভার করতে হতো। রাতের খাবার থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১৮ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে… আমার মনে আছে, ল্যাব থেকে আসার সময় ক্ষুধায় বাঁকা হয়ে যেতাম আমি।’

এমন অনিশ্চিত জীবন থেকে বেরিয়ে এসে আজ প্রধানমন্ত্রীর সামনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়েছেন পিরু মোল্লা।

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অনেক তরুণের মতো আমারও সিভিল সার্ভিসের চাকরির স্বপ্ন ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে মেধাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করেছেন। ফলে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবায় নিয়োজিত হতে পেরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’

কিন্তু পিরু মোল্লার গল্প এখনো শেষ হয়নি। তিনি বলেন, ‘৩ আগস্ট ২০২০, যেদিন আমি আমার প্রথম চাকরিতে যোগদান করি, সেদিনই আমার বাবার ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে। এর দুই মাস আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার ভগ্নিপতি মারা যান।

সন্তান সম্ভবা বোন ও তার দুই সন্তানের ঠাঁই হয়েছিল আমাদের পরিবারে। চরম আর্থিক সংকটে বাবার চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেলে আমি সরাসরি আপনার কাছে আবেদন জানালাম। আশা করছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে হয়তো সাড়া পাব।

কিন্তু এত দ্রুত সাড়া পাওয়াটা ছিল অকল্পনীয়। কয়েকদিনের মধ্যে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক আমার বাবাকে ফোন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সহায়তার কথা জানান। কিন্তু চিকিৎসা শুরু করার মাত্র ১৫ মাসের মাথায় আমার বাবা মারা যান।

কয়েকদিন পর মেজোর ভাই এবং বিধবা বোনেরও ক্যান্সার ধরা পড়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনিই পরিবারের মানবিক সংকটে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের দুর্দশায় সাহায্যকারী হিসেবে বারবার উপস্থিত হওয়ার জন্য দয়ালু প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সুযোগ পেয়ে আমি সৌভাগ্য বোধ করছি।’

 

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *