ঢাকা ওয়াসার (এমডি) তাকসিম এ খান দীর্ঘ ধরে কর্মরত হয়েছেন। সম্প্রতি তার নামে নানা প্রকার অনিয়মের কথা প্রকা্শ হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জানা যায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে তার সক্ষতা থাকার কারনে অনেক বিষয়ে তিনি ম্যানেজ করে ফেলেন বলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। আবারও তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অফিস করতে চান।
আমেরিকায় বসে ফের অফিস করতে দ্ইু মাসের ‘ভার্চুয়াল অফিসের’ অনুমতি চাচ্ছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ঢাকা ওয়াসা বোর্ড সভার আলোচ্যসূচিতে এ বিষয়টি রাখা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ঢাকা ওয়াসা এমডি ঈদের কিছুদিন পর থেকে ভার্চুয়াল অফিস করতে আমেরিকা যাবেন।
এর আগে ঢাকা ওয়াসার এমডি ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত দুই মাসের জন্য ভার্চুয়াল অফিসের অনুমতি নিয়ে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। দুই মাসের জন্য অনুমতি থাকলেও তিনি তিন মাস ভার্চুয়াল অফিসে কাজ করেছেন। তিনি ছুটিতে যাওয়ার কয়েকদিন আগে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড তার চুক্তি নবায়ন করে। এ সময় তার কোনো ছুটির পাওনা ছিল না। এরপরও সুপরিচিত ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান টানা তিন মাস আমেরিকা থেকে ভার্চুয়াল অফিস করছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এবার সরকার ভার্চুয়াল অফিসের ছুটি মঞ্জুর করলে তাতে ঢাকা ওয়াসার এমডিকে দিয়ে সংস্থার তেমন কোনো কাজ হবে না। কারণ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সময়ের পার্থক্য প্রায় ১০ ঘণ্টা। উদাহরণস্বরূপ, যদি বাংলাদেশে অফিসটি সকাল ৯ টায় শুরু হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রে রাত ১১টা বাজে। বাংলাদেশে বিকেল ৫টায় অফিস শেষের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে সকাল ৭টা বাজবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ঢাকা ওয়াসার সকল কাজ তদারকিতে সময়ের ব্যবধানও একটি বড় সমস্যা।
জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যমে বলেন, আগামীকাল (আজ) ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সভা রয়েছে। ওই সভার আলোচ্যসূচি হাতে পৌঁছেছে। সেখানে ঢাকা ওয়াসার এমডির ভার্চুয়াল অফিসের বিষয়টি আছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি ভার্চুয়াল অফিসের অনুমতি চাইলেও আমি এটার পক্ষে মত দেব না। যতটুকু শুনেছি তার শারীরিক অসুস্থতা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমেরিকায় থেকে ভার্চুয়াল অফিস করতে চাচ্ছেন। যদি আমেরিকা যাওয়া তার একান্তই প্রয়োজন হয়ে থাকে, তাহলে আমরা তার দুই মাসের ছুটি মঞ্জুর করতে পারি।
ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “‘ঢাকা ওয়াসার বর্তমান এমডি কত অন্যায়, কত অযৌক্তিক কাজ করছেন। সাংবাদিক মহলও তাদের দায়িত্ববোধ থেকে সেগুলো প্রকাশ করছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ঢাকা ওয়াসা বোর্ডে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলেও তিনি অনেক সদস্যকে ম্যানেজ করে ফেলেন; এ কারণে বোর্ড সভায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কোনো আইনে ভার্চুয়াল অফিসের বিধান নেই। এরপরও বোর্ড সদস্যদের মাধ্যমে বিভিন্ন মহলের চাপে ২০১৯ সালে তিনি প্রস্তাবটি অনুমোদন করেন। দুই মাসের পরিবর্তে তিনি অতিরিক্ত এক মাস আমেরিকায় অবস্থান করেন। এ সময় বোর্ড সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়; তার এক মাসের বেতন কেটে নেওয়া হবে। পরে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড তা বাস্তবায়ন করেনি। কারণ অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি হলেও বোর্ডের অনেক সদস্য এমডি সাহেবের পক্ষে কথা বলেন। ‘
ঢাকা ওয়াসা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান তার নিজস্ব এজেন্ডা অনুমোদনের জন্য বোর্ড সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি বলেন, অনেক সময় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা এতে সম্মত হয়েছেন। এসব ঘটনায় বর্তমান ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সদস্যরা অসম্মানিত বোধ করেন। যে বিষয়ে বোর্ড সদস্যরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেখানে বোর্ডের নিয়োগকৃত এমডি তাদের ওপর ছড়ি ঘুরাচ্ছেন। কোনো কোনো সদস্য কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এমডির ইচ্ছামাফিক মতামত দিচ্ছেন। অন্যরা ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছু মেনে যাচ্ছেন। এর ফলে ঢাকা ওয়াসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আজকের বোর্ড সভায় পানির দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হবে বলেও জানা গেছে। বোর্ডের সিনিয়র সদস্যরা পানির দাম বাড়ানোর পক্ষে না থাকলেও এমডি এর জন্য চাপ দিচ্ছেন। বোর্ড সদস্যরা আগামী ডিসেম্বরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চান বলে জানিয়েছেন, তবে আজকের বোর্ড সভায় তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া নতুন জনবল কাঠামো, ঢাকা ওয়াসার কর্মচারী সমবায় সমিতি লোপাট ১৩৫ কোটি টাকা নিয়েও বোর্ড সভায় আলোচনা হতে পারে। কারণ এই দুটি বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা হয়েছে। বোর্ডের সদস্যদের অনেকেই বিষয়টি সমাধান করতে চান। ঢাকা ওয়াসা প্রশাসন ও কর্মচারীরাও বোর্ড চেয়ারম্যানকে দুটি বিষয়ে বোর্ডে আলোচনা করে সমাধানের অনুরোধ করেছেন।
প্রকৌশলী তাকসিম এ খান ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ধাপে ধাপে তিনি সুস্থ আছেন। এরপর ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। শুরু থেকেই বছরের একটা দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি আবারও যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান। তবে ছুটিতে নয়, সেখানে থেকে ভার্চুয়াল অফিস করতে চান।
প্রসঙ্গত, ওয়াসার এমডি আবারও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চুয়াল অফিস করার জন্য অনুমতি চেয়েছেন। এর আগেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অফিস করেছেন। তার বিরুদ্ধে না অনিয়মের অফিযোগ থাকলেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে সময় পার করছেন।
বাংলা দেশে এরকম যোগ্য মানুষের অভাব রয়েছে? উনার বড়ো চাঁদ কপাল আমেরিকার বাইডেনের চেয়ে ও।
হাইরে অভাগা দেশ!