বিশ্বের মধ্যে গনতান্ট্রিক দেশ গুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তারাষ্ট্র। বর্তমান সময়ে দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছে জো বাইডেন। সম্প্রতি তিনি বিশ্বের গনতান্ত্রিক দেশ গুলোর রাষ্ট্র প্রধানদের নিয়ে এক সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। এই সম্মেলনে বিশ্বের গনতান্ত্রিক দেশ গুলোর রাষ্ট্র প্রধানরা আম্ন্ত্রন পেয়েছেন। তবে অনেক রাষ্ট্রই বাদ পড়েছে এই সম্মেলন থেকে। এই নিয়ে সর্বত্র চলছে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা। সম্পর্তি এই বিষয়ে কিছু কথা জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্ট্রিংগুয়িসড অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে সামিট ফর ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্র সম্মেলন। এই সম্মেলন ও সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে চ্যানেল আইয়ের জনপ্রিয় টকশো তৃতীয় মাত্রায় কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্ট্রিংগুয়িসড অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। এই সম্মেলনের তাৎক্ষণিক ফলাফল এখনই দেখা যাবে না বা ফল পাওয়া যাবে না। এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক যে দেশগুলো আছে (সবাই যে গণতান্ত্রিক ছিল তাও নয়), তাদের মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করা। বৈশ্বিকভাবে গণতন্ত্রের যে সংকটটি চলছে সেটাকে এক ধরনের স্বীকৃতি দেওয়া হলো এবং এটা মোকাবিলা করতে হবে বৈশ্বিকভাবে। এমনটাই বললেন ড. আলী রীয়াজ।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর তালিকা কি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো নিয়েই কী না জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, অবশ্যই, কারণ আপনি এমন কোনো সম্মেলন করবেন না, যেখানে আপনার বিরোধী থাকবে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েছে। এক. কর্তৃত্ববাদের বিরোধিতা, দুই. দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থা গ্রহণ, তিন. মানবাধিকার পরিস্থিতি। এসব বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ আছে। তারা বিশ্বাস করে যেসব দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, সেসব দেশে এই তিনটি বিষয়ের মানদণ্ড অনেক মাত্রায় বেড়েছে। তাই তাদের সামিট ফর ডেমোক্র্যাসি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর হ্যাঁ, তালিকা নিয়ে প্রশ্নও আছে। সেখানে এমন অনেক দেশও আছে যারা কোনোভাবেই এই তালিকায় অবস্থান পাওয়া অধিকার রাখে না। প্রশ্ন হলো একে আপনি যদি বিবেচনা করেন, রাজনৈতিকভাবে, বৈশ্বিকভাবে, গণতান্ত্রিক প্রশ্নকে সামনে এনে যুক্তরাষ্ট্র এক ধরনের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেরও অনেক সমস্যা আছে। অভ্যন্তরীণভাবে তারা গণতান্ত্রিক সংকটাপন্ন। বিভিন্নভাবে তারা সেটা মোকাবিলার চেষ্টাও করছে। পাশাপাশি যেটা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র এই তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যে মানদণ্ড করেছে এমনটাও নয়। এখানে কিছু কৌশলগত বিবেচনাও থেকেছে। যেমন- তারা পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত তা গ্রহণ করেনি। আবার ফিলিপাইনও রয়েছে তালিকায়। তালিকায় এমন অনেক দেশ আছে যেগুলো বা সেসব রাষ্ট্রের মানদণ্ড অটুটভাবে অনুসরণ করলে সেগুলো তালিকায় থাকত না। তার পরও, সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য যেটা, সেটা হচ্ছে দুটো দিক এক. বৈশ্বিকভাবে গণতন্ত্রের প্রশ্নটাকে সামনে নিয়ে আসা। মানবাধিকার। তবে গণতন্ত্র বা কর্তৃত্ববাদের বিরোধিতা করা এবং নাগরিক অধিকারগুলো সংরক্ষণ এবং তার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া। দুই. বৈশ্বিকভাবে এক ধরনের (ইডিওলজিক্যাল) আদর্শিক এক ধরনের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। আপনি সেটাকে কোল্ড ওয়ার বলবেন কিনা, সেটা আপনার বিষয়। এটাকে এক ধরনের কোল্ড ওয়ার বলা যেতেই পারে। একদিকে চীনের প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছে গণতান্ত্রিক সম্মেলনে। চীন এবং রাশিয়া, তারা যে চেষ্টাটা করছেন। লিভারেল অর্ডার বা গ্লোবার অর্ডার যেটা আছে, তাকে বৈশ্বিকভাবে বদলে দেওয়ার চেষ্টা। যেখানে এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিয়েছে, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বিশেষত গত চার বছরে। ট্রাম্পের শাসনামলে। যুক্তরাষ্ট্র যেই অবস্থানটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এটা সেই চেষ্টারই এক অংশ। ফলে একটা হচ্ছে- কৌশলগত দিক।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিকভাবে লিবারেল অর্ডার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। এটাই স্বাভাবিক। তাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আপনি পছন্দ করেন আর না করেন, সেটা বিষয় নয়। বিষয়টা হচ্ছে তারা যেটা করছেন সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। ভুল করছেন না সঠিক করছেন, সেটা আমরা আলোচনা করতে পারি। এই সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে ভবিষ্যতে কীভাবে কর্ম কৌশল তৈরি করা যায়, সেটা বিবেচনা করা। এখন যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক ধরনের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা কী কৌশল গ্রহণ করবেন, কীভাবে বিবেচনা করবেন, আলোচনা করবেন, কোন ধরনের কাঠামো তৈরি হবে, কাঠামোর প্রয়োজন আছে কিনা, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষেত্রে, আঞ্চলিক কাঠামোর ক্ষেত্রে, এগুলো এখন আলোচনার বিষয়। ফলে এই মুহ‚র্তে দুজনের সম্মেলন থেকে বেরিয়ে এসেই যে বড় কোনো কিছু অর্জন হবে তাও মনে হয় না। শিগগিরই কিছু অর্জন হবে তাও মনে করি না। সামনে দিনগুলোতে এই ধরনের যোগাযোগ, যে ধরনের ফোরাম তৈরি হয়েছে সেটা কত দূর পর্যন্ত কাজ করে এবং কী কী কাজ করে। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য পূরণে কতটা সফল হলো তা এখনই সুষ্পষ্ট না। তাই তো আলী রীয়াজ জানালেন, এখন পর্যন্ত আমরা সুষ্পষ্ট কোনো ধারণা পাচ্ছি না। কিন্তু এই যে আমি আপনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি সেটাই এক ধরনের লোক প্রণয়নের ক্ষেত্রে সফলতা। এই সাফল্যের দিকটা হচ্ছে কর্তৃত্ববাদের বিরোধিতা করা, মানবাধিকার বা নাগরিক অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা, সেগুলো যে সংকটে আছে তা মোকাবিলা করার যে জরুরি, এবং এগুলো যে সকলে মিলেই করতে হবে। পাশাপাশি চীনের প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, আদর্শিক দিক থেকে যে পার্থক্যটা তৈরি হয়েছে, গণতন্ত্রকে রি-ডিফাইন করা হচ্ছে। কিন্তু গণতন্ত্রের কতগুলো মৌলিক জায়গা আছে, সেই জায়গাগুলোর ক্ষেত্রে আলোচনা তৈরি হচ্ছে। কাঠামোগুলো তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বড় ধরনের কাঠামো তৈরি হবে তাও আমি মনে করি না। কিন্তু আপনি আদর্শিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র এই অবস্থানটা তৈরি করার চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টাটার সাফল্য আমি দেখতে পেয়েছি। তবে দুই দিনের বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে কর্ম প্রক্রিয়া এই করা হবে ওই করা হবে, এরকম কিছু কি তৈরি হয়েছে! আসলে তাগিদ আছে কিন্তু সম্ভাবনা ছিল না। ফলে সাফল্যের মাপকাঠি ওইটা নয় যে, কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হলো কিনা! ভবিষ্যতে হয়তো হবে। কিন্তু অন্তত যতটুকু সাফল্য অর্জন করা গেছে, আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। এটাও একটা ইতিবাচক দিক বলে আমি মনে করি। এই আলোচনাটা হওয়া দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলো যে একেবারে আনক্রিটিক্যালি এক্সেপ্ট করা হবে এমন কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলো নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেমন-তেমন, বিশ্বের জন্য ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের ডিসিশন আমরা আনক্রিটিক্যালি এক্সেপ্ট করছি না। যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতাগুলো আমরা চিহ্নিত করতে পারছি। অপূর্ণতাগুলো চিহ্নিত করা যাচ্ছে। এবং এই জায়গাগুলোতে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ নয়, বৈশ্বিকভাবে গণতন্ত্রের স্বার্থে এটা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এই আলোচনাটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখি।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, দু-তিনটা বিষয় বলি, গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা হয়। এই আলোচনা থেকে প্রায়সই বলা হয়, গণতন্ত্রের সর্বজনীন কোনো সংজ্ঞা নেই। এটা ঠিক। কিন্তু কতগুলো ফান্ডামেন্টাল প্রিন্সিপালস আছে, আপনি যেভাবেই বিবেচনা করেন, গণতন্ত্রের চারটি ফান্ডামেন্টাল প্রিন্সিপালকে আপনি অস্বীকার করতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিক পদ-পদ্ধতির মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে গণতন্ত্রের চারটি ফান্ডামেন্টাল প্রিন্সিপালস।
তাহলে রিপাবলিক হলেই কি গণতন্ত্র রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে- এ প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, আমি সেটা বলিনি। আমি বলেছি, রিপাবলিক পদ-পদ্ধতির মধ্য দিয়েই এই আলোচনাগুলো হয়েছে। একাডেমিক্যালি হয়েছে, বিতর্কের মধ্য দিয়ে হয়েছে, প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়েছে। চারটি ফান্ডামেন্টাল প্রিন্সিপালের মধ্য দিয়ে বিষয়গুলো বোঝা যাবে। এর মধ্যে প্রথম কথাটা হচ্ছে পপুলার সভরিজেন্ট বা জনগণের সার্বভৌমত্ব মান। কোনো ডিভাইন পাওয়ার আসলে ডিটারমাইন করবে না। নাগরিকরা ঠিক করবেন, জনগণরা ঠিক করবেন, এই তো! এই যে ধরেন, ইউরোপে চার্লসের সঙ্গে যে বিরোধ, সেই বিরোধেই আপনি বলেন, কিংবা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রগুলো যেভাবে গড়ে উঠেছে। সে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটা বড় রিলেশন তৈরি হয়েছে। সেটা ওয়েস্টার্ন এক্সপেরিয়েন্স। আপনি যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় যেতে পারছেন। পপুলার সভরিজেন্টের প্রশ্ন বা নাগরিকের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নটা হচ্ছে সর্বপ্রথম প্রশ্ন। দুই নম্বর বিষয় যেটা সেটা হচ্ছে লেটারেজশন-কনসেন্ট অব দ্য কাভার্ড, আপনি কনসেন্টে আছে কি নেই! প্রশ্নটা হচ্ছে কনসেন্ট কি প্রতিদিন নেওয়ার বিষয়? না কিন্তু প্রিয়ডিক হলেও কনসেন্ট এর ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হবে। তিন নম্বর বিষয়টি হলো অ্যাকাউন্টাবলিটি সিস্টেম, যেটা হচ্ছে জবাবদিহির ব্যবস্থা করা। আপনি যখন বলছেন, ৭০ শতাংশ লোক চীনকে পছন্দ করে। এর জবাবদিহির ব্যবস্থাটা কী? ধরুন জবাবদিহির ব্যবস্থা ভার্টিক্যাল তো নয়। উক্ত পাঁচ বছরে নির্বাচনের কথাই তো বলা হচ্ছে না। একটা সমাজে অ্যাকাউন্টাবিলিটির বিভিন্ন রকমের পদ-পদ্ধতি তৈরি হয়। তার মধ্যে একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হরাইজেন। সেটা হচ্ছে সমাজে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যেটা সাংবিধানিক পদ্ধতিতে তৈরি হবে। উদাহরণ হিসেবে আপনি বলতে পারেন যে, মানবাধিকারের প্রশ্ন বলুন, আপনি অ্যান্টিকরাপশনের কথাই বলুন, সমস্ত রকম ক্ষেত্রে এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, শুধু সাংবিধানিক ব্যবস্থা নয়, সিভিল সোসাইটির মধ্যে থেকেও প্রত্যেক নাগরিককে সংগঠিত হতে হবে। এবং চার নম্বর ফ্যাক্টর যেটা সেটা হচ্ছে ভিডমেস এক্সপ্রেশন আপনি যা বলতে চাচ্ছেন সেটা বলতে পারছেন কিনা! সেল্প ফ্রিডম, মিডিয়া ফ্রিডম। এগুলো কিন্তু একেবারে ফান্ডামেন্টাল প্রিন্সিপাল। ফান্ডামেন্টালের বাতি অবশ্যই গণতন্ত্রের মধ্য থেকে বিভিন্ন রকম হবে। প্রত্যেক জায়গার পার্লামেন্ট সিস্টেম হবে না, প্রত্যেক জায়গায় একই রকম পদ্ধতি হবে না। কিন্তু ফেয়ার ইলেকশনের কথাও আপনি বাদ দিতে পারবেন না। এগুলোই হচ্ছে ফান্ডামেন্টাল প্রিন্সিপালস। গণতন্ত্রের সর্বজনীন কোনো সংজ্ঞা নেই বলে এই চারটা ফান্ডামেন্টাল প্রিন্সিপালকে আপনি এভায়েড করছেন। তাহলে প্রশ্ন হলো এই ফান্ডামেন্টাল প্রিন্সিপালকে আপনি এক্সিকিউট করবেন কী করে? এক. উইনিভার্সাল সাফ রেট, অর্থাৎ সকলের ভোট দেওয়ার অধিকার থাকতে হবে। এতে যেন নাগরিক কতগুলো যুক্তি-সঙ্গত বাধা-নিষেধ বাদে আপনাকে প্রত্যেক নাগরিকের কাছে এই অধিকারটা পৌঁছে দিতে হবে। দুই. সেটাকে এক্সারসাইজ করার জন্য ফ্রি সিস্টেম তৈরি করতে হবে। সেটাই হচ্ছে ফেয়ারনেস অব ইলেকশন। ইনট্রিডিউজ এভরিয়ান অন ইলেকশন, যেন প্রত্যেকেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। আর কিছু লিমিটেশনস কি থাকবে? থাকবে, অবশ্যই থাকবে। এর মানে এই নয় যে, আপনি এমন একটা সিস্টেম তৈরি করবেন যেখানে কোনো নির্বাচনই থাকবে না। নির্বাচনগুলো হবে সাজানো। তৃতীয় বিষয়টি হলো সিমিলারেটস। কথা বলার পর যদি মধ্যরাতে দরজায় নক করা শুরু হয়, কিংবা যদি কথা বলার পদ-পদ্ধতিই না থাকে। ধরুন, মিডিয়া ফ্রিডম থাকছে না, সমাবেশ করার অধিকার থাকছে না। এগুলোকে আমরা গণতন্ত্র বলে বিবেচনা করব না। অন্তত পক্ষে এই বেসিক জায়গাগুলোতে আপনাকে একত্রিত হতে হবে। এখানে এসেই প্রশ্নটা হচ্ছে আপনি শুধুমাত্র জনপ্রিয়তার ২০ শতাংশ, ৭০ শতাংশ বিষয়ই নয়। নিজেই ভোট নিয়ে নিচ্ছেন। ৭০ শতাংশ ভোট যে কোনো নির্বাচন প্রক্রিয়াতেই হতে পারে। এরপর যে খুব ভালো হয় তা নয়। মেজরিটি ইন দ্য ডেমোক্র্যাসি। এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। গণতন্ত্র খুব যে পারফেক্ট সিস্টেম তা নয়। কেউ কখনই বলেনি যে গণতন্ত্র পারফেক্ট সিস্টেম। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভুল করতে পারে আবার ঠিকও করতে পারে।
একটা উদাহরণ দিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নামের এক ভদ্রলোক আমেরিকার একটি বিরাট অংশ এবং ইলেকট্রোরাল ভোটের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। চার বছর পর তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই লোকটাকে আমরা ক্ষমতায় রাখব না। সে পদ্ধতি একমাত্র গণতন্ত্রে আছে। গণতন্ত্রের বাইরে আপনি কিন্তু যেতে পারবেন না। ডেমোক্র্যাসির সবচেয়ে বড় স্ট্রেন্থটা হচ্ছে এই জায়গায়। ইউ ক্যান মেক দ্য মিসটেক অ্যান্ড ইউ ক্যান কারেক্ট। কারেকশনের পদ-পদ্ধতিটা এক। আপনি চীনের কথা বলছেন তো! তাহলে বলুন শি জিন পিংকে ক্ষমতাচ্যুতের পদ-পদ্ধতি কী? আমার কথা হলো কথাগুলোর ব্যাখ্যা করি আমি। যুক্তরাষ্ট্র লিডারশিপে যেতে চায়। যে কোনো হেডিমনিক পাওয়ার তাই চাইবে। এখন মাল্টিপোলার পাওয়ার তৈরি হয়েছে। কিন্তু আপনি একেবারে কনক্রিটটা বাদ দিয়ে তো হিসাবটা করতে পারবেন না। যেমন- চীনকে বাদ দেওয়ার কথা কেউ বলছে না। গ্লোবাল সিস্টেমে চীনকে বাদ দেওয়ার কথা কেউ বলেনি।
এছাড়া সহযোগিতার প্রসঙ্গে তিনি বললেন, সহযোগিতা তো হচ্ছে! সহযোগিতা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্র ধরে। এ ক্ষেত্রে আপনি কতগুলো ফান্ডামেন্টাল পার্থক্যটা তো থাকবেই। এগুলো তো এড়ানো সম্ভব নয়। সবাইকে তাহলে চীনের পদ্ধতিতে এক দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। যুক্তরাষ্ট্র বলেন, বাংলাদেশ বলেন, ভারত বলেন, আসুন আমরা সকলে মিলে একদলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। চীন যেহেতু একদলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, চীনের সঙ্গে তো এক দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। কারণ হচ্ছে ফান্ডামেন্টাল সিস্টেমের বিরোধিতা হবে। এখন যদি আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে, আমরা গণতন্ত্রই চাই না। এটা ভিন্ন কথা। একেবারেই ভিন্ন কথা। একটা বড় অংশ চায় একবার কেউ নির্বাচিত হলে তাকে সারাজীবনের জন্য নির্বাচিত করে দেওয়া। নির্বাচিত হওয়ার পদ-পদ্ধতি তো দেখতেই পাচ্ছি। প্রশ্নটা হচ্ছে যে, অ্যাকাউন্টাবিলিটি মেকানিজমের ওপর। আমি লিডারশিপের কথাটা কী বলেছিলাম? যুক্তরাষ্ট্র চায় না লিডারশিপ হারাতে। তবে চীনও চায় লিডারশিপে আসতে। আইডিওলজি হেজিমনি পাওয়ার হিসেবে এক্সিস্ট করতে পারে। হেজিমনি মানেই হচ্ছে শক্তি নয় কিন্তু, এটা আপনিও জানেন আমিও জানি। আমি যখন হেজিমনি বায়োলজিক্যাল বলি এবং ইকনোমিক সব অর্থেই বলি। ধরুন, চীনের যে পাওয়ার তৈরি হয়েছে, সে পাওয়ার অফকোর্স ইকোনমিক পাওয়ার হিসেবেই তৈরি হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে সেনশন এবং সাবেক সেনাপ্রধানের ভিসা বাতিল এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রীর কানাডায় ঢুকতে না পারা- এ ইস্যুতে আলী রীয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের পদক্ষেপটা যদি আমরা দেখি, দীর্ঘদিন ধরেই তো র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং এর বাইরে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা চলছে। ২০১৯ সালের ঘটনা, জেনেভায় যখন কমিটি অ্যাগেনিস্ট টর্চারের মিটিং হচ্ছিল সেখানেই এই প্রশ্ন উঠেছিল। এই ধরনের টর্চার, আনএক্সপেক্টেড কিলিং মানবাধিকার সংগঠনগুলো সব সময় এই প্রশ্নগুলো তুলেছে। এই যে কমিটি অ্যাগেনিস্ট টর্চার, সেটাতে ১৯৯৮ সালের পরে ২১ বছর কোনো প্রতিবেদনই দেয়নি। এবং বারবার বলা সত্ত্বেও এগুলো নিয়ে সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এগুলো খুব ইতিবাচকভাবে কাজে দেয়। যেমন ধরুন, ইউনিয়ন ওয়ার্কিং গ্রুপ; তারা এক সময় ৬১ জন গুমের তালিকা প্রকাশ করেছিল। তারা বাংলাদেশের কাছে বারবার জানতে চেয়েছে, ২০১১ সালের ৪ মে, ২০১৬ সালের ৯ মার্চ, ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি, একই বছরের ২৯ জুন। ২০১৩ সালে এই কমিটির পক্ষ থেকে দেশে যেতেও চাওয়া হয়েছিল। এই প্রশ্নগুলো দীর্ঘদিন ধরেই উঠছে। আমরা ব্যক্তি, দল, সরকারকে আলাদা করব। বাংলাদেশে যে ভাবমূর্তির কথা বলা হয়েছে তা অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু সেখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে পথটা যেভাবে তৈরি হয়েছে, সেগুলো উচিত ছিল বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মোকাবিলা করা। এগুলো অস্বীকার করলে সেগুলো তদন্তের ব্যবস্থা করা দরকার। যেসব আন্তর্জাতিক কথা উঠে এসেছে, সেসব রোভাশ্রি ইনফরমেশন প্রোভাইড করা দরকার ছিল। এগুলোর কারণেই এ পরিস্থিতির তৈরির সুযোগ হয়েছে। আলাপ আলোচনার পদ-পদ্ধতি নিশ্চই আছে। আমি মনে করি না যে জুনিয়র অফিসারের নোট করে দিয়েছেন, তাতেই কেউ একজন সই করে দিয়েছেন। এটা একটি সিরিয়াস ডিসিশন। এবং কো-অর্ডিনেটভাবেই হয়েছে। কারণ- আপনি একই সময়ে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে। গণতন্ত্রের সম্মেলন যখন হয়েছে তখন এগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে। সো দে মাস্ট বি কো অর্ডিনেট ইফর্ট। এই সম্মিলিত চেষ্টার জায়গাটা তৈরি হওয়ার পদ পদ্ধতি সেটা আসলে একটু বোঝা দরকার। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা মোকাবিলা করা যেত। এর একটা পদ্ধতি ছিল এই অভিযোগগুলোকে নোট করা। এসবের ব্যাখ্যা করা যেত। কেবল অস্বীকৃতি দিয়ে কাজ হবে না। এর প্রভাব তো পড়বেই। তবে এর মাত্রাটা কী হবে সেটাই আসলে দেখার বিষয়।
সম্প্রতি কোয়াড, আইপিএস, অকাস ইত্যাদি জোটে বাংলাদেশকে টানা চেষ্টা করা হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এর কারণেই কি এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে কী না জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, কেবল মাত্র একটি ক্ষেত্রে তো আর নয়, যেমন ধরুন নিরাপত্তা ইস্যু আরও অনেক কিছু জড়িত। বাংলাদেশ দেশ হিসেবে যদি বলি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেট। বাংলাদেশের সঙ্গে যে ট্রেড ডিল দেখেন, তা বাংলাদেশের ফেভারে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র কিন্তু আছে। এবং সেগুলো সম্প্রসারিত করার চেষ্টাও আছে এবং থাকবে। ফলে কেবল মাত্র যে এসব জোটে যুক্ত না হওয়া এই নিষেধাজ্ঞার কারণ নয়। এসব কৌশলগত বিবেচনা কি থাকবে? অবশ্যই আছে। বাস্তবতা হচ্ছে এখানে চীন চেষ্টা করছে তার প্রভাব বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার।
বাংলাদেশ, রাশিয়া, চীন জো বাইডেনের আমন্ত্রন না পাওয়া দেশ গুলোর তালিকায় রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের নাম না থাকায় চীন-রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষ নিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানিয়েছে রাশিয়া। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। বর্তমনা সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করছে।