বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে ঘিরে বেশ বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। এমনকি এই নিষেধাজ্ঞাকে নিয়ে সর্বত্র চলছে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা। এমনকি এই নিষেধাজ্ঞার সূত্র ধরে মার্কিন সহাসয়তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর সময়ও দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রদেয় সামরিক অনুদান কোথায় ব্যবহার হবে সে বিষয়ে মার্কিন আইনের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত সমঝোতায় বাংলাদেশ সেফগার্ড বজায় রাখতে চায়। মার্কিন ‘লেহি’ আইনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মঙ্গলবার এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা এ বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত। তাদের সব শর্তই মোটামুটিভাবে আমরা মানি। এখন আমরা আমাদের জবাবে ভাষা নিয়ে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্র প্লেন ফরম্যাটে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সম্মতি জানতে চায় উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা আমাদের সেফগার্ড বজায় রেখেই তাদেরকে আমাদের সম্মতির কথা জানিয়ে দিবো। বাইডেন প্রশাসন নির্ধারিত ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যেই ঢাকা সম্মতিপত্র পাঠানোর চেষ্টা করছে বলেও জানান সচিব। মার্কিন অনুদান সংক্রান্ত এগ্রিমেন্ট বা সমঝোতা সইয়ের আগে বাংলাদেশে কী কী বিষয়ে জোর দিচ্ছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, অনুদান প্রদান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বক্তব্য থাকলে তা যাতে আগেভাগে জানানো হয় অর্থাৎ আগাম কনসালটেশন, নির্ভরযোগ্য প্রমাণের সূত্র এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চাই আমরা।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, যদি কোনো সংস্থাকে তাদের অনুদান দিতে আপত্তি থাকে তবে তারা যেন সেটি জানায় এবং আমরা যেন আগাম আলোচনা করতে পারি এটা নিশ্চিত করেই মার্কিন লেহি অ্যাক্টের অধীনে অনুদান পাওয়া সংক্রান্ত সম্মতিপত্র পাঠাবো। নির্ভরযোগ্য প্রমাণ বিষয়ে জানতে চাইবে বাংলাদেশ এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ এবং এক্ষেত্রে বাড়তি সময়ও বাংলাদেশ চায় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। আগামী ১লা জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০ বছরের পুরনো আইন ‘লেহি অ্যাক্ট’-এ আনীত সংশোধনী কার্যকর হতে যাচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, এ কারণে তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমাদের জবাব দিতে হবে। আমরা (৩১শে ডিসেম্বর) মধ্যেই জবাব দেয়ার চেষ্টা করছি।
র্যাবের ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা: মার্কিন ল ফার্ম নিয়োগের চিন্তা: এদিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় প্রয়োজনে মার্কিন ল ফার্মকে সম্পৃক্ত করার চিন্তা করছে ঢাকা। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছি, যাতে করে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা যায় কিনা, সেটিও আমরা দেখছি। র্যাবের বিষয়ে যেসব প্রশ্ন রয়েছে, সেগুলোর জবাব যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ বা প্রতিষ্ঠানের কাছে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, গত ১০ই ডিসেম্বর র্যাব এবং সংস্থার সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপরে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর নানা বিষয় হস্তক্ষেপ করে থাকে। দেশটি বাংলাদেশেরও নানা সুনাম করে অনেক প্রতিবেদন করেছে। এমনকি সম্প্রতি দেশের উন্নয়নের অগ্রগতি দেখে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে বিশেষ স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে সকল সফলতার মধ্যে কয়েকদিন আগেও দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে ঘিরে বেশ বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। তবে এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।