মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের একটি শহর হ্যামট্রামি যেখানে বড় ধরনবের অভাবনীয় ঘটেছে। আগামী কিছু দিন ধরে ঐ শহরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সচেতন মুসলমান ও মুসলিম বিদ্বেষী যারা তাদের দৃষ্টি থাকবে।
এই শহরে সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন আর এই নির্বাচনে হ্যামট্রামি শহরের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সকলেই মুসলিম। জয়ী প্রার্থীদের মধ্য দুজনই হলো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। আর এই শহরের অধিকাংশই মুসলমান যারা সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাস করে আসছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বুকে এই শহরকে মনে হবে এক টুকরো বাংলাদেশ। দোকান বা অফিস-আদালতের সাইনবোর্ডে শুধু বাংলা ভাষা দেখা যায় না, শহরের দেয়ালগুলোতে, পথেঘাটেও দৃশ্যমান বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক। অবশ্য, সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের শুধু নয়, মিশিগানের ছোট্ট শহর হ্যামট্রামিক, সারা বিশ্বের অভিবাসীদের আবাসস্থল এই শহরে যেখানে সবাই যেন আপন। এই উদারতার কারণে, শহরের ৩০,০০০ বাসিন্দাদের অর্ধেকেরও বেশি অভিবাসী। তাদের অধিকাংশই মুসলমান।
জনসংখ্যায় এ পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও। এ মাসের শুরুতে সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে বিজয়ী সবাই মুসলিম। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসেই যা আগে কখনও ঘটেনি। এ মাইলফলক উদযাপনের পাশাপাশি ইসলামবিদ্বে’ষীদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে নবনির্বাচিতদের।
হ্যামট্রামিকের নবনির্বাচিত মেয়র আমির গালিব বলেন, মুসলিম সরকার হিসেবে আমরা উদাহরণ তৈরি করতে চাই। এর বেশি কিছু নয়। এখানে সবকিছু এখানকার নিয়মেই চলবে। আমরা সবার প্রতিনিধিত্ব করবো। মুসলিম হিসেবে আমার বিশ্বাস অন্য কারো ওপর চাপিয়ে দিতে চাইবো না।
এমনিতেই নানা ধর্মের, বর্ণের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য পরিচিত হ্যামট্রামিক। বৈচিত্র্যে ভরপুর মাত্র সাড়ে ৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরে হাঁটলেই যেনো মিলবে বিশ্বভ্রমণের স্বাদ। নবনির্বাচিত কাউন্সিলররা বলছেন, তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের প্রভাব পড়বে না এ বৈচিত্র্যে।
ধ’র্মান্ত’রিত মুসলিম ও কাউন্সিল ওম্যান অ্যামান্ডা জ্যাকোস্কি বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে রাজনৈতিক জীবনের সাথে মেলাতে চাই না। শহরের ৫০ ভাগই মুসলিম, তবে সংখ্যাল’ঘুরা যাতে বঞ্চিত মনে না করে, সেটাও খেয়াল রাখবো। সততা, স্বচ্ছতা, শক্তিশালী নেতৃত্ব, সদিচ্ছার মতো ইসলামিক মূল্যবোধগুলো প্রদর্শন করতে হবে।
কাউন্সিলম্যান খলিল রেফাই বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শহর, যেখানে সব জনপ্রতিনিধি মুসলিম। তাই অনেকেরই নজর আছে এখানে। আমাদের প্রমাণ করতে হবে, মুসলিমরাও নেতৃত্ব দিতে পারে, পরিবর্তন আনতে পারে।
মেয়র ছাড়া হ্যামট্রামিক সিটি কাউন্সিলের সদস্য ৬ জন। এর মধ্যে দুজনই বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত। তাদের বিশ্বাস, অল্প সময়ের মধ্যেই হ্যামট্রামিকের মেয়র হবেন কোনো বাংলাদেশি। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ, অর্থাৎ সাড়ে ৩৮ লাখ মানুষ মুসলিম। মার্কিন গবেষকদের ধারণা, ২০৫০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।
উল্লেখ্য, হ্যামট্রামিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যের ওয়েন কাউন্টির একটি শহর। ২০২০ সালের আদমশুমারি অনুসারে, শহরের জনসংখ্যা ছিল ২৮,৪৩৩ জন। হ্যামট্রামিক ডেট্রয়েট শহর দ্বারা বেষ্টিত পশ্চিম সীমান্তের একটি ছোট অংশ ছাড়া যা একইভাবে ঘেরা হাইল্যান্ড পার্ক শহরকে স্পর্শ করে। হ্যামট্রামক মিশিগান রাজ্যের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ পৌরসভা।
২০ শতকে পোলিশ-আমেরিকান জীবন ও সংস্কৃতির একটি প্রাণবন্ত কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত, হ্যামট্রামিক ২১ শতকে বিশেষ করে ইয়েমেন এবং বাংলাদেশ থেকে নতুন অভিবাসীদের আকৃষ্ট করেছে। ২০১৩ সালে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর হয়ে ওঠে। ২০১৫ সালে, হ্যামট্রামিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সিটি কাউন্সিলের প্রথম শহর হয়ে ওঠে, যেখানে কাউন্সিলের ছয় সদস্যের মধ্যে চারজন ছিলেন মুসলিম। ২০২১ সালের নভেম্বরে, হ্যামট্রামক একটি সম্পূর্ণ মুসলিম-আমেরিকান সিটি কাউন্সিল এবং একজন মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হন, যা সম্পূর্ণরূপে মুসলিম-আমেরিকানদের দ্বারা শাসিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পৌরসভা হয়ে ওঠে।