আমেরিকান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগ করে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এ সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
কুগেলম্যান লিখেছেন, ‘ভারত-কানাডা দ্বন্দ্ব নিয়ে সব বোধগম্য দৃষ্টির মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি বড় ঘটনা উপেক্ষা করা সহজ। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।’
দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এটি দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞা। ‘
কুগেলম্যান লিখেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে ভিসা নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পরে, গত শুক্রবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের (আইন প্রয়োগকারী সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল) ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা করা হয়েছিল। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল, নির্বাচনের পর তা কার্যকর করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগেই তা বাস্তবায়িত হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হলো উল্টো।”
যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তার গুরুত্ব প্রমাণ করতেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে।
কুগেলম্যান লিখেছেন, “বাংলাদেশে মার্কিন ভিসা নীতি বাস্তবায়নের বিষয়ে গত শুক্রবারের ঘোষণাটি আরেকটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ।এখানে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী—উভয় দলের সদস্যদেরই টার্গেট করা হয়েছে। স্পষ্টতই যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায়, তাদের উদ্যোগকে যেন বিরোধী দলের পক্ষ নেওয়া মনে করা না হয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে থাকে। এতে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেন যে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধীদের পাশে আছে।’
কুগেলম্যান ২০২১ সালে “গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগের কারণ র্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লেখেন, “আমার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের সময় সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি শুনেছি তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র কেন মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশকে এত চাপ দিচ্ছে? বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে মূল্যবোধভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির ‘পোস্টার চাইল্ড’ বানিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অথচ ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এটি করতে পারছে না। ”
কুগেলম্যান লিখেছেন, “এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হল মার্কিন নীতি দেশভেদে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ভিন্ন। দীর্ঘ উত্তর আরও জটিল। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র স্বাচ্ছন্দ্যে সেই ঝুঁকি নিতে পারে এবং সম্ভবত সফল হবে বলে মনে করে। মার্কিন কর্মকর্তারা সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নিষেধাজ্ঞার পর থেকে র্যাবের ক্ষমতার অপব্যবহার কমেছে। ‘
কুগেলম্যান প্রশ্ন তোলেন, ‘কিন্তু ভিসা সীমাবদ্ধতা কি বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে? আমার এ বিষয়ে সন্দেহ আছে। হ্যাঁ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিজাতদের অনেকের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দল শেষ পর্যন্ত যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে শক্ত বাধা হবে কিনা আমি নিশ্চিত নই। ‘